৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৩১

প্রিমিয়ার ব্যাংকের অবহেলায় ৬৮২ জনের হজ গমনে অনিশ্চয়তা

প্রিমিয়ার ব্যাংকের অবহেলার কারণে ৬৮২ হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের মহাখালী শাখায় হজযাত্রীদের ১৩ কোটি টাকার ওপরে জমা রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তিন দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল পাঠানো একটি চিঠিতে গতকালকের মধ্যেই এ টাকা হজ পরিচালনাকারী বেসরকারি লিড এজিন্সের ব্যাংক হিসেবে পাঠানোর নির্দেশনা দিলেও তারা সে টাকা জমা দেয়নি। এতে হজযাত্রীদের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী হজের নিবন্ধনের শুরুতে হজযাত্রীদের বিমানভাড়ার জনপ্রতি এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা হয়। তেমনিভাবে ৬৮২ হজযাত্রীর বিমানভাড়া বাবদ ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায় জমা রয়েছে। এর মধ্যে হজ এজেন্সি মাজিদ ট্র্যাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ২৫৪ জন হজযাত্রীর চার কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা এবং গ্র্যান্ড শিকদার এয়ার ট্র্যাভেলসের ৪২৮ হজযাত্রীর মোট আট কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা জমা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজ পালনে গত ৯ মে থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেছেন। আগামী ১২ জুন বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ হজ ফ্লাইট যাবে। অধিকাংশ ব্যাংক ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের টাকা বেসরকারি হজ এজেন্সির অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়েছে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও প্রিমিয়াম ব্যাংক এখনো ৬৮২ হজযাত্রীর বিমান ভাড়ার টাকা ফেরত দেয়নি। এতে ওই সব হজযাত্রীর হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৩১ মার্চ হজযাত্রীদের বিমানভাড়া বাবদ অর্থ এজেন্সির হজকার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের নির্ধারিত হিসাব থেকে লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর গত ২৬ মে দু’টি চিঠিতে প্রিমিয়ার ব্যাংকে লিয়েনকৃত ৬৮২ জন হজযাত্রীর বিমানভাড়ার টাকা ২৭ মের মধ্যে লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে হজযাত্রীর বিমানভাড়ার সমুদয় অর্থ লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসেবে পাঠানো হয়নি। এতে এসব হজযাত্রীর বিমানের টিকিট কেনাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক টাকা স্থানান্তর না করায় ৬৮২ হজযাত্রীর হজ গমনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য গতকাল সোমবারের মধ্যে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া বাবদ ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করতে প্রিমিয়ার ব্যাংককে সর্বশেষ চিঠি দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ব্যাংকটির মহাখালী শাখার উপমহাব্যবস্থাপক বরাবর দেয়া চিঠিতে গতকালকের মধ্যেই টাকা স্থানান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়। অন্যথায় এ কারণে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যেতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটিকে দায় দায়িত্ব নিতে হবে বলেও চিঠিতে হুঁশিয়ার করা হয়। কিন্তু গত রাত সাড়ে ৭টার দিকে প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা এজেন্সির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেনি। এ কারণে অনিশ্চয়তা কাটেনি এতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হজযাত্রীরা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন্স মো: নকীবুল ইসলাম রাতে সাড়ে ৭টার দিকে নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে ব্যাংক থেকে কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। তবে সর্বশেষ চিঠি দেয়ার পর সেটেলমেন্টের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো পরিশোধ হয়েছে কিনা তা আমি অবগত নই।

এদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগেই ৩১৮ জন হজযাত্রী বাবদ ছয় কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বিষয়টি নিয়ে হেড অফিস কাজ করছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আকবর হজ গ্রুপ নামে একটি হজ এজেন্সির কারণে মূলত এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ওই এজেন্সি তাদের হাজীদের নিবন্ধনের সময় দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা করে জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও সে সময় ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়েই প্রত্যয়নপত্র নিয়েছে। এতে ওই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন। কিন্তু আকবর হজ গ্রুপের মালিক বর্তমানে পালিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো: মঞ্জুরুল হক গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংক এখনো টাকা পরিশোধ করেনি। তবে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। আগামীকাল (আজ) আবার চেষ্টা করা হবে। আশা করি বিষয়টির সমাধান হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/840141