৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:২৮

বংশগতি নির্ধারণে ডিএনএ একমাত্র উপাদান নয়

নতুন শিক্ষাক্রমের অন্তরালে-১৫

নতুন শিক্ষাক্রমের অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের পৃষ্ঠা ৫০ এ বলা হয়েছে মানবদেহের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কারো চুল কোঁকড়ানো, আবার কারো চুল সোজা, কেউ লম্বা বা কেউ খাটো, কারো চুল কালো আবার কারো চুল বাদামি। আমাদের দেহে এই যে নানা রকম বৈশিষ্ট্য সেগুলো আমাদের শরীরে ক্রোমোজমে থাকা ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) বহন করে থাকে। জীবের যেকোনো বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ‘ডিএনএ’তে থাকে। ডিএনএ মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য সরাসরি তার সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে নিয়ে আসে। যেটি বংশগতি নামে পরিচিত। কাজেই একথা স্পষ্ট যে, বংশগতির ধারা রক্ষা করার মূল ভূমিকা পালন করে ক্রোমোজমে থাকা মানবদেহের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ডিএনএ।

এখানে যে বিষয়টি অসম্পূর্ণ সেটি হলো, ডিএনএ জীবের সব জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধারা বর্তমানে ভুল মনে করা হয়। সুগারকোড, মেমব্রেনকোড, ইলেকট্রিক কোডসহ আরো নানা ভাবে জীব তার পিতা-মাতা থেকে বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এমনকি হিস্টোন প্রোটিনো বৈশিষ্ট্যের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন তৈরি হওয়ার পর এর মোডিফিকেশন ও জ্যামিতিক সমাণু হওয়ার তথ্যও ডিএনএতে থাকে না। নানাদিক বিবেচনায় এখন ডিএনএ জিনকেন্দ্রিক আলোচনায় এড়িয়ে বিদ্যায়তনে জিনোমের আলোচনা করা হয়। যা ডিএনএতে সীমাবদ্ধ নয়।
তথ্যসূত্রসমূহ :
Sergio Pistoi, DNA Is Not a Blueprint. Scientific American, February 6,2020.
Pauline N.C.B Audergon Catamia, Alexander Kagansky, Pin Tong, Manu Shukla, Alison L. Pidoux, Robin C. Allshire. Restricted epigenetic of H3K9 methylation. Science, 2015 DOI:10.1126/science. 1260638.

এখানে প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেহে এই যে নানা রকম বৈশিষ্ট্য সেগুলোর একাংশ আমাদের দেহে থাকা ক্রোমোসোমে বহন করে থাকে। জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্যে ডিএনএতে সংরক্ষিত থাকে। তবে এটাই বংশগতির একমাত্র নিয়ামক বলে এখন আর ভাবা হয় না। ডিএনএসহ কোষের অন্যান্য উপাদান মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য তার সন্তানসন্ততিতে নিয়ে আসে যেটি বংশগতি নামে পরিচিত। সুতরাং একথা পরিষ্কার যে, শুধু ডিএনএ নয়, বরং কোষের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাই বংশগতির মূলধারা রক্ষার জন্য দরকারি।
অপরদিকে অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে, কিভাবে জীবের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা যায় এবং কিভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ধারিত হয়। জীবের গঠনের এই বৈশিষ্ট্যগুলোর তালিকায় দেখা যাবে অঙ্গানু জীবের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং বংশানুক্রমে প্রবাহিত করে। অনেকেরই হয়তো জানা আছে যে, জীবের সব বৈশিষ্ট্য তার ডিএনএতে জমা থাকে। আর ডিএনএ এর যে নির্দিষ্ট কোনো অংশে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের তথ্য থাকে তাকে বলে জিন। কোষের বিভাজন অধ্যায়ে অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আবার ক্লাস নাইনের বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১৩৯ নং পৃষ্ঠায় ডিএনএ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ডিএনএ বা (ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক এসিড) হচ্ছে কোষের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্থায়ী রাসায়নিক অণু। এটি কোষের বা সামগ্রিকভাবে সব জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোষেই ডিএনএ থাকে। ক্রোমোজোম ডিএনএ ও কিছু প্রোটিন দ্বারা তৈরি। ডিএনএ এই প্রোটিনের সাথে পেঁচিয়ে লম্বা সুতার মতো তৈরি করে যেটি ক্রোমোজোম নামে পরিচিত। এছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিডের মধ্যেও ডিএনএ থাকতে পারে। নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবকোষে ডিএনএ এর পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে। ডিএনএ এক ধরনের রাসায়নিক জৈব যৌগের অণুগুলো নিউক্লিওটাইড নামক অনেকগুলো ছোট অণু দ্বারা গঠিত। বইয়ের ৯.৫ নং চিত্রে ডিএনএর গঠন দেখানো হয়েছে।

এখানে সমস্যা হচ্ছে, ডিএনএ জীবের সব জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ও নিয়ন্ত্রণ করে এই ধারণাও বর্তমানে ভুল মনে করা হয়। সুগারকোড মেমব্রেন কোড ইলেকট্রিক কোডসহ আরো নানাভাবে পিতা-মাতা থেকে সন্তানরা বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এমনকি হিস্টোন প্রোটিনও বৈশিষ্ট্যের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন তৈরি হওয়ার পর এর মোডিফিকেশন ও জ্যামিতিক সমাণু হওয়ার তথ্যেও ডিএনএ থাকে না। নানা দিক বিবেচনায় এখন ডিএনএর জিনকেন্দ্রিক আলোচনা এড়িয়ে বিদ্যায়তনে জিনোমের আলোচনা করা হয় যা ডিএনএ-তে সীমাবন্ধ নয়।

এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, ডিএনএ হলো কোষের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্থায়ী রাসায়নিক অণু। জীবের বিভিন্ন জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্যের প্রবাহে এর ভূমিকা আছে। তবে আগে ভাবা হতো ডিএনএ একাই জীবের সব জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধারণা বর্তমানে ভুল মনে করা হয়। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকম সজীব কোষেই ডিএনএ থাকে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/840061