৩ জুন ২০২৪, সোমবার, ৬:৩৬

বান্দরবানেও বেনজীরের বিপুল সম্পদ

দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদের খোঁজের পাশাপাশি পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও তাঁর বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

প্রচলিত আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও কেউ চাইলেই জমি কিনতে পারেন না। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে বেনজীর কিভাবে বান্দরবানে জমির মালিকানা লাভ করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, সুয়ালক মৌজার হেডম্যান মং থোয়াই চিং মারমা এবং জমির কেয়ারটেকার মংওয়াইচিং মারমা।

তবে কালের কণ্ঠ’র হাতে আসা একটি আমমোক্তারনামার কপি সূত্রে জানা গেছে, রাবার চাষের জন্য লিজ পাওয়া অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটির মালিকানা নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। ২৫ একর পাহাড়ি ভূমিটি তিনি নিজের পাশাপাশি স্ত্রী ও এক কন্যার নামে কিনেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বান্দরবান কেরানিহাট সড়কের মাঝেরপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের বান্দরবান ইফনিট অফিসের সামান্য দূরে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের এই জমির অবস্থান।

ওই জমিতে তিনি একটি দ্বিতল ভবন, মাছ ও গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।
নোটারি পাবলিকের কাছে নিবন্ধন করা আমমোক্তারনামা অনুযায়ী, বর্ণিত ওই জমির মালিক বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়ার বাসিন্দা শাহজাহান। রাবার চাষের জন্য তিনি সরকারের কাছ থেকে ২৫ একর জমি লিজ পেয়েছিলেন। আমমোক্তারনামায় ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের কথা উল্লেখ করা হলেও হোল্ডিং নম্বর উল্লেখ করা হয়নি।

আমমোক্তারনামায় বলা হয়েছে, চাকরিসূত্রে বর্তমান প্রস্তাবিত লিজ গ্রহণকারী (বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা ও কন্যা ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর) দেশের বিভিন্ন এলাকা ও দেশের বাইরে থাকায় জমির লিজ বা ক্রয়সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদন এবং তদারক করা সম্ভব নয় বলে মংওয়াইচিং মারমার সঙ্গে জমি ক্রয় ও আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পাদন করতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পণ চুক্তি করেন।

২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর এই আমমোক্তারনামা সম্পাদিত হয়।
বান্দরবানের নোটারি পাবলিকে অ্যাডভোকেট শামসুল হক রনি এবং অ্যাডভোকেট মাধবী মারমার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে এতে নতুন লিজ গ্রহণকারীদের পেশাগত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। বেনজীর আহমেদের পরিচয় হিসেবে পিতা ও মাতার নাম এবং তাঁর স্ত্রী ও কন্যার পরিচয় হিসেবেও তাঁদের পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ঠিকানা হিসেবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্ণিত জমিতে বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে পাওয়া গেলেও তাঁরা জমির প্রকৃত মালিকের পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, পুলিশের একজন বড় কর্তার এই জমি স্থানীয় যুবক মংওয়াইচিং মারমা দেখাশোনা করেন। তাঁদের বেতনও তিনি পরিশোধ করেন।
এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও আমমোক্তারনামায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত মংওয়াইচিংয়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, সাবেক আইজিপির নামে কোনো জমি এই জেলায় আছে কি না রেকর্ডপত্র না দেখে এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন অনুযায়ী কোনো জমির বন্দোবস্তি, লিজ বা মালিকানা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মৌজা হেডম্যানের সুপারিশ থাকতে হয়। বর্ণিত ৬১৪ দাগের ২৫ একর জমি শাহজাহানের নামের পরিবর্তে বেনজীর আহমেদ বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ‘নামজারি’ করা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে মৌজা হেডম্যান মং থোয়াই চিং মারমার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আমমোক্তারনামায় জমির মালিক শাহজাহান, পিতা : আবুল কাশেম, মধ্যমপাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ড, বান্দরবান পৌরসভা উল্লেখ রয়েছে। তবে গত দুই দিন চেষ্টা করেও শাহজাহানের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক মৌজা ছাড়াও লামা উপজেলার সরই মৌজায় বেনজীর আহমেদের নামে আরো জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো এসব জমির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2024/06/03/1393941