৩ জুন ২০২৪, সোমবার, ৬:১৯

৫ বছরে চিনি-পেঁয়াজ রসুনের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এখন বিলাসী সামগ্রী হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল সাড়ে ২৭ টাকা। চলতি বছরের ১৯ মে পণ্যটির দাম কেজিতে ৪৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭২ টাকায়।
একই ভাবে আলোচ্য সময়ে অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে চিনির দাম ১৫২ শতাংশ, রসুনের মূল্য ৩১০ শতাংশ, শুকনা মরিচ ১০৫ শতাংশ ও আদার দাম বেড়েছে ২০৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে পাইজাম চালে দাম ১৫ শতাংশ ও মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা গেছে।

গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হয়েও বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা আয় করি কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়, যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। আমরা কোন অর্থনীতির দেশে রয়েছি? সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। সরকার অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ট্যারিফ কমিয়ে দেয়। তার সুফল তোলেন এক ধরনের ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, যে চাল দরিদ্র মানুষ বেশি কেনেন সে জায়গাতেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা বেশি। গরিবের মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধি ধনীদের সরু চালের চেয়ে বেশি। এমনকি সেটা থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে মসুর ডাল ৯৫, আটা ৪০-৫৪, ময়দা ৬০, খোলা সয়াবিন ৮৪, বোতলজাত সয়াবিন ৫৬ ও পামওয়েলে দাম ১০৬ শতাংশ বেড়েছে। এসময়ে ব্রয়লার মুরগি ৬০, গুঁড়াদুধ ৪৬-৮০, ইলিশ মাছ ৩৫ ও রুই মাছের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে গরুর গোশতের দামও বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক। আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিতে আমরা ৯ ও ১০ শতাংশে অবস্থান করছি, যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি।

দেশের অর্থনীতি বড় রকমের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে জানিয়ে সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, অর্থনীতি বড় রকমের চাপের মুখে রয়েছে। এই চাপটি শুরু হয়েছে কোভিডের পর থেকে। ইউরোপে যুদ্ধের কারণে এটি অব্যাহত রয়েছে। দুর্বল রাজস্ব আদায়, সরকারের ঋণগ্রহণের প্রবণতা, বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্যে চাপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য, রিজার্ভের অবনতি তিনটি কোয়ার্টারে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, একই চাপ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ছিল। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা, নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলতা, সুশাসনের অভাবে কোনো সুফল দেখা যায়নি। নতুন বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা অর্জন বেশি প্রাধিকার পাওয়া উচিত।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগে শেয়ারের দিকে কিছুটা পতন দেখতে পাচ্ছি। শ্রীলঙ্কার চেয়েও আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন বেশি। এটি সহনশীল পর্যায়ে না রাখতে পারা সরকারের ব্যর্থতা।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে ১৭টি দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি এবং খাবারে পেছনে মাথাপিছু খরচের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে ওই ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম, সাত হাজার ৮০৫ ডলার। এটি ২০২২ সালে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে ডলারের হিসাবে। অথচ ওই ১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ ৯২৪ ডলার। এই তালিকায় অন্য ১৬টি দেশ হলো ইরান, ভারত, লাওস, শ্রীলঙ্কা, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া, বলিভিয়া, মরক্কো, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, জর্দান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/839876