২ জুন ২০২৪, রবিবার, ১০:২৬

ক্রমেই ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে সরকারের ঋণ

এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকা

সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বর্তমানে তা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে। এর কারণ, এক বছরের ব্যবধানে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পুঞ্জীভূত ঋণ গিয়ে ঠেকেছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ঘরে। এটি জিডিপির ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা (জিডিপির ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ)। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের প্রকৃত ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। জিডিপির হিসাবে পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতির সর্বশেষ এ হিসাব প্রকাশ করেছে। অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণস্থিতির পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) সরকারের প্রকৃত ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার ২১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এগুলোর বাইরেও সরকার প্রদত্ত কিছু আর্থিক গ্যারান্টি বা দায় রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট আর্থিক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৬৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৩৪ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, সরকারের মোট পুঞ্জীভূত ঋণের মধ্যে ৫৭ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎসের এবং ৪৩ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ। গত ডিসেম্বর শেষে মোট পুঞ্জীভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা (জিডিপির ১৯%)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে পুঞ্জীভূত অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৬৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা (জিডিপির ১৯.৪২%)।

অন্য দিকে পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৪.০৪%)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা (জিডিপির ১১.১৪%)।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট পুঞ্জীভূত অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এমনকি তা কয়েক মাস ধরে নেগেটিভ হয়ে আছে। অর্থাৎ এ খাত থেকে সরকার ঋণ না নিয়ে বরঞ্চ মানুষের সুদ-আসলে ঋণ পরিশোধ করছে বেশি। ফলে আগামী ক’বছর পর এ খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়া শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে, অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পুঞ্জীভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা (এর মধ্যে ট্রেজারি বিল থেকে ১,২৮,৭৪১ কোটি টাকা, ট্রেজারি বন্ড ও এসপিটিবি থেকে ৩,৭৮,৭০৬ কোটি টাকা ও সুকুক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা); সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা এবং জিপিএফ তহবিল থেকে ৬৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।

অন্য দিকে সরকারের পুঞ্জীভূত বৈদেশিক ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দ্বিপক্ষীয় উৎসের তুলনায় বহুপক্ষীয় উৎস থেতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, এটি এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬৭ শতাংশ বেশি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।

এ দিকে সরকারের ঋণ বাড়লেও তা এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/839545