২ জুন ২০২৪, রবিবার, ১০:০৩

মৌলভীবাজারে নদীর বাঁধ ভেঙে ১৫০ পরিবার পানিবন্দী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে তিন দিনের টানা বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ও উজানের পাহাড়ি ঢলে, দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে ধলাই নদ রক্ষা বাঁধের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়ণপুর, চৈত্রঘাট, উবাহাটা ও সুরানন্দপুর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রাসেল মিয়া ও মোঃ আব্দুর রহিম বাঁধে ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো পরিদর্শন করে এসেছি। ঠিকাদারকে দ্রুত সময় কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া শমশেরনগর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকার আরও প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। দুই দিন ধরে এসব পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ায় অতিকষ্টে জীবন যাপন করছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে ধলাই নদ রক্ষা বাঁধের চৈতন্যগঞ্জ ও নারায়ণপুর, উবাহাটা ও সুরানন্দপুর এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। বুধবার চৈত্রঘাট এলাকায় ভাঙনে নদীর পানি ও পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পায়। তবে দুই দিনেও নিম্নাঞ্চলে পানি না কমার কারণে কৃষির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারেও থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার পানি জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।

পতনউষার ইউনিয়নের পানিবন্দী মোঃ কামাল মিয়া বলেন, আমরা দুই দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছি। আমাদের কেউ সহযোগিতা করেনি। উপজেলার কৃষক মোঃ আনোয়ার খান বলেন, ঢল ও বন্যার পানিতে আমাদের আউশখেত, পেঁপে, বেগুনসহ শাকসবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলো সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ অলি আহমদ খান বলেন, নিম্নাঞ্চল এলাকার শতাধিক পরিবার দু’দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছে। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, পানিবন্দী পরিবারদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, বন্যায় পানিবন্দী ও ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবারসহ সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান।

কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে কোথাও অপরিবর্তিত : সিলেট ব্যুরো: সিলেটের জৈন্তা ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। আবার কোথাও অপরিবর্তিত আছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা আশা করছেন। গতকাল শনিবার পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি অনেকটা কমেছে। অন্যদিকে সিলেট সদর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সিলেটে গত শুক্রবার থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। শনিবার বিকেল পর্যন্তও বৃষ্টি হয়নি। তবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। গতকাল নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৩ হাজার ৩৪২ জন। জেলার ৮টি উপজেলার মোট ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে চারদিন ধরে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হয়। এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িও হয়েছে প্লাবিত। তবে গতকাল থেকে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর উপজেলাসহ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অন্যান্য জায়গায় অপরিবর্তিত আছে।
পাহাড়ি ঢলে ছাতকের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতকের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পাঁচ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কমতে শুরু করেছে জেলার যাদুকাটা, কুশিয়ারা ও রক্তি নদীর পানি। তবে দ্রুতগতিতে বাড়ছে ছাতকের সুরমা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকার নিম্নাঞ্চলের মুক্তিয়ার খলা, হরিপুরসহ ৫-৬ গ্রামের প্রধান সড়ক ডুবে গেছে। ফলে ছাতক উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ। তবে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে বন্যা মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুত রয়েছে।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের বন্যায় সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে যেহেতু সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়ছে সেজন্য আমরা বন্যা মোকাবিলার জন্য আগাম সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের কুশিয়ারা, যাদুকাটা, রক্তি নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/557772