১ জুন ২০২৪, শনিবার, ৪:২৭

বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ডিম প্রতি ডজন দেড়শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বেড়েছে মুরগিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। ফলে মানুষ যা আয় করছে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, টানা দুই বছর যাবত ভোক্তার আয়ের চেয়ে বেড়ে গেছে ব্যয়। যেখানে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক৮ শতাংশ, সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ হিসাব গত এপ্রিলের। আগের বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের এপ্রিলে ভোক্তার আয় যেখানে বেড়েছিল ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, বিপরীতে ব্যয় বেড়েছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার হার কম বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতিধারা’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথম বারের মতো প্রকাশ করেছে। এখন থেকে প্রতি তিন মাস পর পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। যে পরিমাণ আয় হচ্ছে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আর এ অবস্থা গত দুই বছর যাবত চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যায় মূল্যস্ফীতির হার। এতে মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অব্যাহতভাবে মজুরি বাড়ার হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়া উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চে রংপুর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বেশি বেড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলে এখনও মজুরি বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি।

মানুষের ব্যয় বাড়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ২০২২ সাল থেকেই বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হতে থাকে। যে ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে, আমদানি খাত বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতিতে বরাবরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও ওইসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যায়। যদিও গত মার্চ থেকে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে এ খাতের চাপও কিছুটা কমেছে। তবে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।
সামনে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ ও এর মোকাবেলা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অর্থপ্রবাহ ও সরকারের আয়-ব্যয়ের নীতি বিশেষ করে রাজস্ব নীতি সমন্বয় করতে হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি চাপ নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/839367