৩১ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৩২

দেশীয় বকেয়া প্রদানে পদক্ষেপ নেই পরিশোধ করা হচ্ছে আদানির বকেয়া

ডলার সঙ্কটে পিডিবি’র দেশি-বিদেশি বিদ্যুৎ কোম্পানির বকেয়া ৩৩১০৮ কোটি টাকা
গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সঙ্কট চলছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। ডলার সঙ্কটের উন্নতি না হওয়ায় লাগামহীন মূল্যস্ফীতির যাতাকলে মানুষ। প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিক পতনে রয়েছে। আর এসব কারণে দেশি-বিদেশি বিদ্যুৎ কোম্পানির বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। বিদ্যুৎ বিক্রির বিপরীতে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) সামগ্রিক বকেয়া ভারতীয় কোম্পানিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির কাছে ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। ভারতীয় কোম্পানিগুলো বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যার মধ্যে আদানি গ্রæপই পিডিবি’র কাছে পাবে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বকেয়া প্রদানের কোন পদক্ষেপ নেই। অথচ আদানিসহ ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
গত বুধবার আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের পরিচালক প্রণব আদানির নেতৃত্বে আদানি গ্রæপের একটি দল বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে বিশেষ করে বকেয়া আদায়ের আলোচনা করতে তার সচিবালয় অফিসে আসার পর অর্থমন্ত্রী বকেয়া পরিশোধের এ আশ্বাস দেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, যে সরকার ভারতের আদানি গ্রæপ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বকেয়া পরিশোধ করবে। যদিও অর্থমন্ত্রী বকেয়া অর্থপ্রদান কবে নাগাদ পরিশোধ করা হবে তা জানাননি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার অনেক আগেই ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে আদানির বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপের নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ডলারের ঘাটতির কারণে পিডিবি’র আদানি গ্রæপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য অর্থ পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছিল তাই প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া যাতে দ্রুত প্রদান করা হয় সেই তাগেদা দিতেই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

পরিদর্শনকারী আদানি পরিচালক অর্থমন্ত্রীর কাছে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য ব্যবস্থা চেয়েছেন বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পিডিবি ২০২৩ সাল থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আদানি গ্রুপ দ্বারা নির্মিত ১৬০০-মেগাওয়াট কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করছে। জানা গেছে, ২৫ বছরের চুক্তির অধীনে, আদানি গ্রুপ উচ্চ মূল্যে পিডিবিতে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে এবং বিশাল অঙ্কের মুনাফা করছে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রণব আদানি বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েও আলোচনা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা টাকা নিয়মিতই প্রদান করা হচ্ছে। এরপর কিছু বকেয়া আছে সেই টাকাও প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রদান নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই।

সরকার ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল সেখানে বর্তমানে সেটি মাত্র ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অবশ্য দেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঋণ কর্মসূচির অধীনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে। আইএমএফ ইতোমধ্যে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিতরণ করেছে এবং আগামী জুন মাসে আরও ১ হাজার ১৫০ কোটি বিলিয়ন ডলার রিলিজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

https://dailyinqilab.com/national/news/661830