২৯ মে ২০২৪, বুধবার, ৪:৫৬

সোয়া কোটির বেশি গ্রাহক অন্ধকারে

রাজধানীতে ঘন ঘন লোডশেডিং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা অচল, দেশের ৩৪.৬ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে এখনো সোয়া কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। অপরদিকে উপকূল এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ইন্টারনেট ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর ১০০ এর অধিক আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারনে গত সোমবার ২২ হাজারের বেশি মোবাইল অসচল হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২০ হাজার ১৪৩টি অসচল ছিলো। যার মোট ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় গ্রাহকরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

প্রাথমিক তথ্যানুসারে একশত তিন কোটি তেত্রিশ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এ দিকে রাজধানী ঢাকায় রিমালে তেমন ক্ষতি না হলেও ঘন ঘন লোডশোডিং দেখা দিয়েছে। এলাকা গুলো হচ্ছে, রাজধানীর বনানী গুলশান,কাওরানবাজা বাংলামোটর মতিঝিলসহ বিভিন্ন বাইরে শহর এলাকায় বিদ্যুতের লোডশোডিং কবলে পড়েছে এলাকাবাসি। তবে দ্রুত এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কোম্পানি গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) তিন কোটি তিন লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ সংযোগ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ১ কোটি ৩১ লাখ গ্রাহকের সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। দেশের অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি।সব সংযোগ ফিরিয়ে আনতে আরইবির ঠিকাদার, নিজস্ব জনবলসহ ৩০ হাজারের বেশি কর্মী মাঠে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিচ্ছিন্ন সংযোগগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ গতকাল রাতের মধ্যে এবং আজ বুধবারের মধ্যে মোট ৮০ শতাংশ গ্রাহকের বিদ্যুৎ-সংযোগ ফিরিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। বাকি গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে বলে সময় বেশি লাগতে পারে। প্রাথমিক তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে আরইবির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। তাদের ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১৪ লাখ ৩ হাজার ৫২৬ জন গ্রাহক এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৮ জন গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। এই ঘূর্ণিঝড়ে ওজোপাডিকোর ৫ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি তিন লাখ নয় হাজার সাতশত দুই) রিকভারির পরিমান এক কোটি একত্রিশ লাখ ছত্রিশ হাজার সাতশত দুই, রিকভারি অবশিষ্ট এক কোটি একাত্তর লাখ তিয়াত্তর হাজার, ৩৩ কেভি ফিডার- ক্ষতি-৭৬৬ রিকভারী-৪৫৫ রিকভারী অবশিষ্ট,৩১১, ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র ক্ষতি ১১০৫ রিকভারী- ৬৫৪ রিকভারী অবশিষ্ট ৪৫১, ১১ কেভি ফিডার, ক্ষতি ৬২৩৫ রিকভারী. ২৩৮৪ রিকভারী অবশিষ্ট- ৩৮৫১, বৈদ্যুতিক খুটি- ক্ষতি ৩৮৩৩ রিকভারী, ২৫৬৭ রিকভারী অবশিষ্ট, ১২৬৬,বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্ষতি ২৮১৮ রিকভারী, ১৬৯৬ রিকভারী অবশিষ্ট ১১২২, তার ছেড়া স্প্যান (কিঃমিঃ) ৩০৫৬ রিকভারী- ১৩৬৩ রিকভারী অবশিষ্ট, ১৬৯৩, ইন্সুলেটর ক্ষতি ২৪২৫৮ রিকভারী- ৭৭২৫ রিকভারী অবশিষ্ট ১৬৫৩৩,মিটার ক্ষতি ৫৯৩৯৯ রিকভারী ৩০৯৩৩ রিকভারী অবশিষ্ট ২৮৪৬৬। প্রাথমিক তথ্যানুসারে ১০৩.৩৩ কোটি (একশত তিন কোটি তেত্রিশ লক্ষ) টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সমিতি, আরইবি -এর ঠিকাদার ও জনবলসহ ৩০ হাজারের অধিক জনবল মাঠে কাজ করছে। আজ সন্ধ্যা ৬:০০ টা নাগাদ ৫০% গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। রাতের মধ্যে ৬০% এবং ২৯/০৫/২০২৪ তারিখের মধ্যে সকল ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন চালুর মাধ্যমে ৮০% গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বাকী গ্রাহকদের সার্ভিস ড্রপ ও মিটার বাড়ী বাড়ী গিয়ে কাজ করতে হবে বিধায় পরবর্তীতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অতিসত্বর সম্পূর্ণ লাইন চালু হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) থেকে বলা হয়েছে, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নেত্রকোনো ও সিরাজগঞ্জের প্রায় ৮০ শতাংশের ওপর সাইট অচল রয়েছে। মোবাইল টাওয়ার অচল হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। অপারেটরা জানায়, উপকূল এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ইন্টারনেট ক্যাবলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাসমূহের ১০০ এর অধিক আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূল এলাকাসমূহে আইএসপি অপারেটরদের প্রায় ৩২০টি পিওপি রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৫০টি পিওপি অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ৩ লাখ আইএসপি গ্রাহক ফিক্সড ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, সে সব জায়গায় বিভিন্ন আইএসপিরা পিওপি পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে পরিসেবা প্রদান করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক পোলগুলো লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। মূলত খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়ে সবাইকে অনুসরণ করতে বলেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া সারা দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে তারা। আর এসব ক্ষতি হয়েছে মূলত খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অনেক জেলা ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়ে সবাইকে অনুসরণ করতে বলেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সেগুলো হচ্ছে, ছেঁড়া তার এড়িয়ে চলুন। কোনো ছেঁড়া তার কারো চোখে পড়লে তা স্পর্শ করবেন না বা সরানোর চেষ্টা করবেন না। তাৎক্ষণিক নিকটবর্তী বিদ্যুৎ অফিসকে জানাবেন। বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ দেখলে ধরবেন না। বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ বা গাছের ডালপালা বা অন্য কোনো বস্তু পড়ে থাকতে দেখলে বিদ্যুৎ অফিসে জানান। নিজেরা তা ধরবেন না বা সরাতেও যাবেন না। ঝড়-বৃষ্টিকালে বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার ধরবেন না। ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত বা যে কোনো ভেজা বৈদ্যুতিক খুঁটি বা টানা তার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। মিটারের কভার তার পরীক্ষা। মিটারের কভার তার পরীক্ষা করে দেখবেন কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না! তার ছিঁড়ে বা কেটে গেলে নিজে ঠিক করার চেষ্টা না করে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করুন। কোনো কভার তারে কাপড় শুকাতে দেবেন না। বিদ্যুৎ কর্মীদের সহযোগিতা করুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবাইকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো কাজে বিদ্যুৎকর্মীরা সহযোগিতা চাইলে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করুন।

https://dailyinqilab.com/national/article/661298