২৯ মে ২০২৪, বুধবার, ৪:২৪

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ নেই অনেক এলাকায় ॥ নয়টি ফ্লাইট বাতিল

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত দুইদিন ধরে চট্টগ্রামে ছিল বৈরী আবহাওয়া। বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে গেছে দমকা বাতাস। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। এতে নগরীর এবং জেলার অনেক উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই দুইদিন ধরে। বৈরী আবহাওয়ায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৯ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে আসা একটি ফ্লাইট চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেছে। আজও চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে। এদিকে দুইদিন স্বাভাবিক হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। বন্দরে ভিড়েছে ১১টি জাহাজ। উদ্ধার করা হয়েছে বন্দরে স্টিল কয়েল ভর্তি আটকে যাওয়া জাহাজ।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা এমএইচএম মোসাদ্দেক জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ১১১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রেমালে প্রভাব কেটে গেছে, বৃষ্টি কমে আসবে, স্বাভাবিক হতে শুরু করছে চট্টগ্রামের আবহাওয়া। আজ তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হবে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন চট্টগ্রাম: প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে বিদ্যুৎ অফিস ও সাব-স্টেশনে পানি ঢুকে পড়েছে। যার কারণে সকাল থেকে হালিশহর, রঙ্গিপাড়া, শান্তিবাগ, রমনা ও শ্যামলী আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ায় ও এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নগরের বেশকিছু এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা রয়েছে। নগরের দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, ওয়াসা, হালিশহর, অক্সিজেন, মাদারবাড়ি, বাকলিয়া, চন্দনপুরা, সররঘাট এলাকার মানুষও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব এলাকার এলাকাবাসীরা জানান, বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ আসে আর য়ায়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুতের দেখা নেই। এতে বাসাবাড়িতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে খাবার ও ব্যবহারের পানি তোলা যাচ্ছে না।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ উপজেলায় ভেঙে পড়েছে গাছ ও ঢালপালা। ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ পড়ে ছিঁড়ে গেছে তার। যার কারণে গতকাল সকাল থেকেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের উপজেলাগুলো। এছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পড়েছেন চট্টগ্রামের মানুষ। ঝড়ের কারণে চট্টগ্রামের ৮ উপজেলায় ৭১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে, ৯৫টি খুঁটি হেলে পড়েছে, ৩৪৯ জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে, ২৫টি ট্রান্সফরমার ও ৩৩০টি মিটার নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক নেই চট্টগ্রামের সীতাকু-, হাটহাজারী, রাউজান, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, লোহাগড়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও চন্দনাইশে। এসব উপজেলায় গতকাল সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। কিছু কিছু উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও অস্বাভাবিক ছিল লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ চট্টগ্রাম দক্ষিণের প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের বেশকিছু এলাকা সকাল থেকে বিদ্যুৎহীন রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন ভবনের নিচতলা এবং মিটার ইউনিট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এসব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রাতে দুর্যোগের কারণে আমাদের লোড ৩৫০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল। এখন সেটি ৬০০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ হয়েছে।

বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ায় চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল মঙ্গলবারও বন্ধ ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ বিবেচনায় নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ফ্লাইট বাতিল: ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১৭ ঘণ্টা পর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা চালুর দিনও গতকাল সোমবার ৯টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বলেন, বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকা- চট্টগ্রাম রুটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২টি, ইউএস বাংলার ৫টি, এয়ার অ্যাস্ট্রা ও নভোএয়ারের ১টি। সোমবার ভোর পাঁচটা থেকে পুনরায় যাত্রীসেবাসহ রানওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ঢাকায় নামল ফ্লাইট: দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে আসা একটি ফ্লাইট চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবাল ফ্লাইটটি অবতরণ করে জানিয়েছেন শাহ আমানত বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসনিম খান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে অবতরণ করতে না পারায় ফ্লাইটটি রি-শিডিউল করে চট্টগ্রামে আসবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানের আরও একটি আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট অবতরণ করার কথা থাকলেও সেটি রি-শিডিউল করা হয়েছে।
স্বাভাবিক চট্টগ্রাম বন্দর: ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া ১১টি জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের জিসিবি, সিসিটি ও এনসিটি জেটিতে। দুইদিন জাহাজশূন্য থাকা জেটিতে আবার শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। স্বাভাবিক হয়েছে আমদানি পণ্য ও কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম। মঙ্গলবার কর্ণফুলী নদীর হাইটাইডে বন্দরের নিজস্ব অভিজ্ঞ পাইলটের তত্ত্বাবধানে ও শক্তিশালী টাগ বোটের সহায়তায় এসব জাহাজ আনা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় সোমবার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও জাহাজ জেটিতে আনা সম্ভব হয়নি। আজ ১১টি জাহাজ জেটিতে আনা হয়েছে। জোয়ার থাকা সাপেক্ষে আরও জাহাজ আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

বন্দরের আটকে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার: বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে ফেরার পথে বোট ক্লাবের কাছে বন্দর চ্যানেলে একটি জাহাজ আটকে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে। জাহাজটি বিকেল মঙ্গলবার বিকেল ৪ টার সময় উদ্ধার করা হয়েছে। বন্দরের তিনটি টাগবোট জাহাজটিকে বহির্নোঙরে নিয়ে যাচ্ছে। এটির প্রফেলর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটিকে জেটিতে আনার ঝুঁকি নিচ্ছে না বন্দর কর্তপক্ষ।

তীব্র ঢেউয়ে তুলনামূলকভাবে হালকা জাহাজটি বন্দরের একটি বয়ার সাথে ধাক্কা খায়। এতে জাহাজটির প্রফেলরের সাথে বয়াটি আটকে যায়। ওই বয়াটিসহ জাহাজটি বহির্নোঙরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে মেরামত করে জাহাজটিকে নতুন সিডিউল দেয়া হবে।
এর আগে জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট ট্রাস্ট শিপিং লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব এলাকার কাছে কর্ণফুলী চ্যানেলে ৪০০ টন স্টিলের কয়েল বহনকারী ‘শি জি ফেং’ নামে চীনের পতাকাবাহী জাহাজটি আটকে গিয়েছিল। জাহাজটি গত ২০ মে ২৫ হাজার টন স্টিলের কয়েল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। এটিকে বন্দরের ৬ নম্বর জেটিতে বার্থিং দিয়ে স্টিল কয়েন খালাস করার কার্যক্রম শুরু হয়।

https://www.dailysangram.info/post/557466