২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:৪২

ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার

ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার। দীর্ঘ মেয়াদের চেয়ে স্বল্প মেয়াদে সরকারি ঋণের সুদহার বেড়েছে বেশি। ১০ মাসের ব্যবধানে স্থানীয় ব্যাংক থেকে সরকারের সুদব্যয় ৫০ শতাংশ থেকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। সুদহার বেড়ে যাওয়ার ফলে সরকারের ঋণের সামগ্রিক সুদব্যয় বেড়ে গেছে। আর এ বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে উন্নয়ন খাতে কাক্সিক্ষত হারে ব্যয় করতে পারছে না সরকার। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন মাসের শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত এপ্রিলে ১০০ টাকা ঋণ নিতে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৪৪ ভাগ। এ হিসেবে ১০ মাসের ব্যবধানে স্বল্প মেয়াদি এ ট্রেজারি বিলের সুদ হার বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। আবার ট্রেজারি বন্ডের দিকে তাকালে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গত জুনে ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ১০০ টাকা ঋণ নিতে সরকারের ব্যয় করতে হতো ৮ টাকা ৯ পয়সা। সেখানে গত এপ্রিলে এসে ব্যয় করতে হয়েছে ১১ টাকা ৯৭ পয়সা। সরকারের ঋণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হচ্ছে ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে। এখানে ১০০ টাকা ঋণ নিতে সরকার ব্যয় করছে ১২ টাকা ২২ পয়সা।

ব্যাংক থেকে চড়া সুদে এ ঋণ নেয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির কারণে এ সুদব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। সংস্থাটি টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। আর এজন্য নীতি সুদহার (রেপো) বাড়িয়ে দিয়েছে। নীতি সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো তার সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে নগদ টাকা ধার নিচ্ছে তাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একই সাথে বেড়েছে আমানতের সুদহার। আর আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণের সুদহারও বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহারের ওপর।
তবে, ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাচ্ছে। এক দিকে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কটের কারণে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না, অপর দিকে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্থায়ন করতে হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে ঋণের সুদ বেড়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং খাত ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। স্থানীয় উৎসের মধ্যে সরকার সাধারণত ট্রেজারি বিল, বন্ড ও সুকুকের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এর বাইরে সঞ্চয়পত্র ও সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকেও ঋণ নেয় সরকার। গত আড়াই বছরে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত দুই খাত থেকেই নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ এবং ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে নেয়া ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ব্যাংক খাতের মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে এ দুই উৎসে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে সরকারের সুদ ব্যয়ও বেড়ে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এ খাতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যয় আরো বাড়বে। সে ক্ষেত্রে তা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ দিকে সরকারের সুদব্যয় অর্থাৎ অনুন্নয়ন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত হারে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারছে না। এর ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে গেছে। ইআরডির সর্বশেষ তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৯.২৬ শতাংশ। গত (২০২২-২৩) অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৫০.৩৩ এবং তার আগের অর্থবছরে এ হার ছিল ৫৪.৫৭ শতাংশ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/838349