২৫ মে ২০২৪, শনিবার, ৪:২২

নৃত্যকে বিবেচনা করা হয় দেবতার প্রার্থনা হিসেবে

নতুন শিক্ষাক্রমের অন্তরালে-৬

সঙ্গীতের তাল/লয় এবং নৃত্যের নানা কৌশল শেখানো হয় পাঠ্যপুস্তকের আলাদা একটি অধ্যায়ে। আবার সনাতন ধর্মে সঙ্গীত ও নৃত্যকে বিবেচনা করা হয় দেবী দেবতার প্রার্থনা হিসেবে। বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতিতে নাচ সরাসরি হিন্দু ধর্মাচার হিসেবে তুল্য। এক সময়ে দেবতার সামনে নৃত্য করা হতো প্রার্থনার ধরন হিসেবে। আরো বলা হয়েছে হিন্দু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতোই হিন্দু ধ্রুপদী নৃত্যকলাও উপাসনার সাথে সংশ্লিষ্ট। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমে এসব নৃত্যশিক্ষা সব শিক্ষার্থীর জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প সংস্কৃতি বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় নৃত্যশিক্ষার একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সঙ্গীত, নাচ আর অভিনয় এরা পরস্পরের আত্মার আত্মীয়। সঙ্গীতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে নাচের, তেমনি নাচের সাথে মিল রয়েছে অভিনয়ের। নাচ বলতে বোঝায় শরীরের ছন্দবন্ধ নানা ভঙ্গি। বইয়ের ৩৮ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে ৪৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নাচের নানা কৌশল ভঙ্গির। রস মুদ্রাকে নাচের দুটি উপাদান উল্লেখ করে এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

ধ্রুপদী নৃত্যের বিবরণে জানা যায়, ধর্মীয় কারণ থেকেই নৃত্যের উদ্ভব হয়েছে এবং মন্দিরে উপাসনা পদ্ধতির অংশ হিসেবেই নৃত্য অতি উচ্চমার্গীয় । আবার হিন্দু ধর্মের উপাসনা পদ্ধতি হিসেবে এর ধরন ও বিষয়ে সব সময়ই নৃত্যের রুহ হলো প্রকাশ ভঙ্গি বা অভিনয়। অর্থাৎ নানান ঘটনা ও ভাব করে দেখানো হয়েছে। (ঔঁষরঁং খরঢ়হবৎ ২০১২). ঞযবরৎ জবষরমরড়ঁং ইবষরবভং ধহফ চৎধপঃরপবং. জড়ঁঃষবফমব. পৃষ্ঠা ১০৬।

অপর দিকে হিন্দুশাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতোই হিন্দু ধ্রুপদী নৃত্যকলাও উপসনার সাথে সংশ্লিষ্ট। সঙ্গীত ও নৃত্যের রেফারেন্স বা উল্লেখ মেলে বৈদিক সাহিত্যে। এতে বোঝা যায় যজ্ঞানুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল কোনো না কোনো নৃত্য। এই মাধুর্যময় শিল্পের আরো উল্লেখ মেলে ঋগে¦দে, আরো বেশি এসেছে অথর্ববেদ ও যজুর্বেদে। কিন্তু নৃত্যের আরো প্রাচীন ও বিস্তারিত উল্লেখ আছে ভারত এর নাট্যশাস্ত্রতে। ঔবধহ ঐড়ষস; ঔড়যহ ইড়শিবৎ (১৯৯৪). ডড়ৎংযরঢ় ইষড়ড়সংনঁৎু অপধফবসরপ, পৃষ্ঠা ৮৫।

অষ্টম শ্রেণীর বইয়ে নৃত্য শেখানোর নানা কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। একটি পাঠে সাঁওতাল নাচের নানা ভঙ্গি বিবৃত হয়েছে। বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠায় নাচের কৌশলে পদচলন, মুখভঙ্গি, ভঙ্গি,পদভঙ্গি, ছন্দ, হস্তভঙ্গি চিত্রসহ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, ৮ থেকে ১০ জনের শিক্ষার্থী নিয়ে একটি দল গঠন করে নৃত্য প্রশিক্ষণের জন্য একটি গান বাছাই করে নেবে। দলের মধ্যে যারা গান ভালো গাইতে পারে তারা গান গাইবে আর বাকিরা গানের সুর ও তালের সাথে নৃত্য করবে। আবার নতুন পাঠ্যসূচিতে নবম শ্রেণীর একই বিষয়ে বইয়ের ৫৭-৫৮ পৃষ্ঠায় নাচের আরো অগ্রগামী কিছু কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। এই কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণন, চক্র, একপদ, আকাশ, কুঞ্চিত, সম, সাচী, প্রলোকিত, উল্লিখিত এসব বিষয়।

এ দিকে পাঠ্যপুস্তকে গান ও নৃত্য শেখাকে বাধ্যতামূলক করে দেয়ার বিষয়টিকে ভালো লক্ষণ নয় বলে মতামত দিয়েছেন ইসলামিক স্কলার ও বিশ্লেষকরা। ইসলাম ধর্মে পুরুষের সামনে নারীর নাচ সম্পূর্ণ হারাম। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা (নারীরা) যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে’। মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও (২৪; ৩১)।

অথচ সংস্কৃতির নাম দিয়ে আবারও হিন্দু নির্যাস বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। নাচের মুদ্রা, মুখভঙ্গি শেখাকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। ছেলেমেয়ে এক সাথে নাচ গান অভিনয় করানো আমাদের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। যদি কেউ মুসলিম মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করে তবে তিনি নিজ দায়িত্বে এসব বিষয় তার সন্তানকে শেখাবেন। কিন্তু এভাবে গণহারে আমাদের মুসলিম সন্তানদের এসব বিষয় শেখাতে বাধ্য করার এখতিয়ার কারো আছে বলে মনে হয় না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/837577