২৫ মে ২০২৪, শনিবার, ৪:২০

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর হিড়িক, মালিকরা টেনশনে

ডেডলাইন ৩১ মে

বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রিভুক্ত ১৪টি দেশ থেকে পাড়ি জমানোর জন্য অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের আগামী ৩১ মে’র পর আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে দেয়া হবে না। এমন ঘোষণার কারণে বাংলাদেশে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর হিড়িক পড়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কতজন শ্রমিক ডেডলাইনের মধ্যে দেশটিতে পৌঁছাতে পারবেন না, তা নিয়ে চলছে অনেক হিসাব-নিকাশ। এ দিকে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সরকার সময় আর না বাড়ালে সে ক্ষেত্রে ২০-৩০ হাজার শ্রমিকের ‘কপাল পুড়তে’ পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে পরিপত্র দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্রের ফাইল জমা হলেই সেটি সাথে সাথে ছাড়পত্র দিয়ে দিতে। যার ফলে ব্যুরোর কর্মকর্তাদের ফাইল ক্লিয়ার করতে প্রতিদিন অনেকটা ‘ঘুম’ হারাম হওয়ার অবস্থা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। গত বুধবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ড্রাইভওয়ের ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে রাত ৮টার দিকে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের লাইন। এএনজেড ইন্টারন্যাশনালের বেশ কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘আগামী ৩১ মে’র পর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কোনো শ্রমিক আর ঢুকতে পারবেন না। আজকে (বুধবার) রাত ১২টার পর আমাদের মালিন্দ্য এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট।’ তারা বলেন, আমাদের অনেক আগেই ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু বিমানের টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়া ও সিট না পাওয়ার কারণে যাওয়া হয়নি। আর আট দিন পর গেলে আমাদেরও সমস্যা হতো। মালয়েশিয়ার কোন কোম্পানিতে কাজ করতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আগে গিয়ে নিই। তারপর কাজ আছে, না আছে তারপর ব্যবস্থা নেবো। সেখানে আমাদের লোকজন আছে। আশা করি সমস্যা হবে না।

ঢাকার নয়াপল্টনের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক গত বৃহস্পতিবার তার দফতরে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মালয়েশিয়া সরকারের সময় অনুযায়ী সবগুলো লোককেই পাঠাতে চাচ্ছি; কিন্তু বিমানের ফ্লাইটের সিট নিয়ে তুঘলকি কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় আমরা আছি টেনশনে। লোকগুলো না যেতে পারলে কর্মীদেরও লোকসান হবে। আমাদেরও বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।

বিমান টিকিট নিয়ে কী ধরনের তুঘলকি কর্মকাণ্ড চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের যাওয়ার হিড়িক, এর ফলে একটি ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম হয়ে গেছে ৬৫/৭০ হাজার টাকা। তাও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৮-২৯ ও ৩০ মে তারিখের টিকিট কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির নামে বুকড করা ছিল। এখন বিমান কর্তৃপক্ষ ওই দিনের টিকিটগুলো শুনছি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির টিকিট বেশি দরকার তারাই টিকিট পাচ্ছে না বলে তিনিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ। তারা দাবি জানিয়ে বলেন, এ মুহূর্তে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রয়োজনীয়তা দেখে বিমান কর্তৃপক্ষের টিকিট দেয়া উচিত। কারণ মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত কর্মীরা যেতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা তো সব শ্রমিক পাঠাতে চাই; কিন্তু ফ্লাইট তো কম।
টিকিট ক্রাইসিসের কারণে কী পরিমাণ শ্রমিক শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তারা ধারণা করছেন, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির ৩০ হাজারের মতো কর্মী হতে পারে। তবে ফাইনাল তথ্য দিতে পারবেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে গত তিন দিন বহির্গমন শাখার উপ পরিচালক মো: সাজ্জাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের জন্য নতুন করে কর্মীদের কোটা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে গত ৩১ মার্চ থেকেই। পরে এক মাস সময় বাড়িয়ে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে শর্ত দেয়া হয়, যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক আসার অপেক্ষায় আছে তারা ৩১ মে রাত ১২টার মধ্য ঢুকতে পারবে। এরপর কাউকে ইমিগ্রেশন অনুমতি দেবে না। এমন ঘোষণার পর থেকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার হিড়িক শুরু হয়।

বলা বাহুল্য, মালয়েশিয়া সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই সময়ের পর অটোমেটিক বিদেশী শ্রমিক যাওয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে, যদি দেনদরবারে কাজ না হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/837578