২০ মে ২০২৪, সোমবার, ১০:৫৩

ধারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো

একদিনেই ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ

ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো। কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশি মাত্রায় ধার নেয়া হচ্ছে, আবার সমালোচনা ঠেকাতে কখনো কলমানি মার্কেট থেকে বেশি মাত্রায় ধার নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও কলমানি মিলে ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে ধার নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সরকারি, বেসরকারি উভয় খাতেরই ব্যাংক রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কাক্সিক্ষত হারে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিদ্যমান আমানত অভাবের কারণে অনেকই তুলে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে ইসলামী ব্যাংকগুলোর গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে আমানত কমেছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে বিনিয়োগ কমার কথা ছিল। কিন্তু আমানত কমলেও ব্যাংকগুলোর এক মাসে ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।

আবার দুর্বল ব্যাংক সবলের সাথে বাধ্যতামূলক একীভূত হওয়ার খবরে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত প্রত্যাহার করছে এ তথ্য কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, শুধু সাধারণ আমানতকারী নন, সরকারি আমানত প্রত্যাহার করার চিঠি দেয়া হচ্ছে। অস্বাভাবিক হারে আমানত কমে যাওয়ায় তারা দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারছেন না। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করেছে বেসিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

অপরদিকে, ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাক্সিক্ষত হারে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে শিল্পের উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। লোকসান কমাতে অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাঁটাই করছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্বের হার। মানুষের কর্মসংস্থান কমলেও সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একদিকে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে, অপরদিকে কমে গেছে আয়। বাধ্য হয়ে মানুষ তার জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছে। এভাবেও আমানত কমে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এসব কারণে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট কাটছে না, বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট দেখা দিলে আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করে থাকে। কিন্তু আন্তঃব্যাংকে বা কলমানি মার্কেটে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো ও বিশেষ রেপোর আওতায় ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ধার করতো ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ বিষয়ে সমালোচনা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ধার করে কলমানি মার্কেট থেকে বেশি ধার করছে। এতে কলমানি মার্কেটে সুদহার বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলো আবারো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নেয়া শুরু করেছে। অর্থাৎ ধারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিল। যেমন, গত ১৩ মে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়া হয় ১২ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। ১৪ মে ধার নেয়া হয় ১৩ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। ১৫ মে ধার নেয়া হয় ১৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়া হয় ১৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়া কমিয়ে দিলেও কলমানি মার্কেট থেকে বেশি মাত্রায় ধার নেয়া শুরু করে। এর ফলে কলমানি মার্কেটে সুদহার ১০ শতাংশে উঠে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আবারো বেশি মাত্রায় ধার দেয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হচ্ছে পৌনে ৯ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ফেরাতে হবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এলে আবারো মানুষ ব্যাংকে বেশি মাত্রায় আমানত রাখবে। এতে কমে যাবে ব্যাংকের টাকার সঙ্কট।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/836341