১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ১০:৪২

লোকসানে দিশেহারা কৃষক

সারা দেশে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে মাঠের ধান ভালভাবে ঘরে তুলতে পেরে কৃষক খুবই খুশি। তবে শ্রমে-ঘামে ফলানো এই ধান নিয়ে বাজারে গিয়ে কৃষকের সেই হাসি মুখ একেবারে মলিন হয়ে যাচ্ছে। লোকসানের গ্যারাকলে পড়ে কৃষকের বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে উৎপাদিত ধানের বাজারমূল্য অনেক কম থাকায় কৃষক দিশেহারা। প্রতি বছর লোকসান গুনতে গুনতে কৃষির উপর থেকে কৃষকরা আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। আর তাতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দেশের কৃষিকে বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে। আর সে জন্য ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে প্রয়োজনে সরকারকে এ খাতে প্রনোদনা দিতে হবে।

দেশের হাওরাঞ্চলের ধান কাটা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলনবিলসহ অন্যান্য অঞ্চলের ধান কাটাও অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। হাওর এলাকার কৃষকদের সংসার চালানোর জন্য যাবতীয় সব খরচ এই বোরো ধান বিক্রি করে চলে। তাই ধান উঠার সাথে সাথে তাদের ধার দেনা পরিশোধ, পরিবারের সদস্যদের জন্য জামা কাপড় কেনাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ধান বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলেই তাদের মুখের হাসি মলিন হয়ে যায়। হতাশায় বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। বাজারে বর্তমানে মান ভেদে মোটাজাতের (হীরা) ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ। আর বিআর ২৯ জাতের চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৩০ টাকা মণ। অথচ একমণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রতি মণ ধানে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

রংপুর, মাগুড়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, জামালপুর, গাজীপুর, নওগাঁ, মেহেরপুর, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ এলাকার কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় তারা হতাশ। নেত্রকোনার কোনাপাড়া বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কাসেম মিয়া জানান, বাজারে মোটা ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা মণ। অথচ একমণ ধান ফলাইতে (উৎপাদন করতে) খরচ হয়েছে ১১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। এখন প্রতিমণ ধান প্রায় ৪০০ টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি বারবার এভাবে লোকসান দিতে হয় তাহলে আগামীতে ধান চাষ না করে অন্য কিছু করার কথা ভাবতে হবে।

বোরো ধান উৎপাদনে খরচ কেমন হয়েছে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামের কৃষক ছন্দু মিয়া জানান, এক বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য পাঁচ কেজি ধানের বীজ প্রয়োজন হয়। হীরা বীজ ধানে খরচ হয় ১৮০০ টাকা। ৬০ কেজি ইউরিয়া সারে ব্যয় হয় ১৮০০ টাকা, টিএসপি সারে খরচ হয় ২৫০০ টাকা, সেচ খরচ হয় ৮ হাজার টাকা, মেশিনে জমি চাষ বাবদ খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। ধান রোপণে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা, কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ৪ হাজার টাকা, আগাছা পরিষ্কার বাবদ খরচ ৪ হাজার ৫০০শ’ টাকা, ধানকাটা বাবদ খরচ হয় ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আর ধান মাড়াই খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। এরপর ধান বিক্রি করার জন্য বাজারে নিতে ট্রলি বা অটোরিকশা ভাড়া ২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে দেখা যায়, এক বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে বিক্রির জন্য বাজার পর্যন্ত নিতে কৃষকের খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। জমিতে খুব বেশি ভাল ফলন হলে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ৪০ মণ। বর্তমানে বাজারে ৮৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করলে কৃষক ৪০ মণ ধানে পাচ্ছেন ৩৪ হাজার টাকা। উৎপাদন ব্যয় ৫০ হাজার থেকে বিক্রয় মূল্য ৩৪ হাজার বাদ দিলে বিঘাপ্রতি কৃষকের লোকসান ১৬ হাজার টাকা।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ধানে লোকসান মানেই খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি। কারণ ধান উৎপাদন করে কৃষককে যদি প্রতি বছরই লোকসান গুনতে হয়। ঋণের দায়ে জর্জরিত হতে হয়। জমি বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। তাহলে কৃষক কেন ধান উৎপাদন করে দেশের ১৭ কোটি মানুষের অন্ন জোগাবেন? তাই কৃষক হতাশ হয়ে ধান চাষ ছেড়ে দিলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। কৃষকের ঘরে যখন ধান থাকে, তখন বাজারে এর দাম থাকে না। ব্যবসায়ীদের গুদামে ধান মজুদ হলেই এ পণ্যটির মূল্য হুহু করে বেড়ে যায়। এতে মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হন। সরকার উৎপাদিত ধানের মাত্র ৩ শতাংশ ক্রয় করে। বাকি ৯৭ শতাংশ ধান ক্রয় করে বেসরকারি চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ বছর বোরো মৌসুমে সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১২৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তার কোনো প্রতিফলন দৃশ্যমান হচ্ছে না। ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের মর্জির ওপরই নির্ভর করছে কৃষকের কষ্টে উৎপাদিত ধানের দাম। মৌসুমের শুরু থেকে প্রতি মণ ধান মোটাজাত ৮০০-৮৫০ টাকা এবং চিকন জাতের ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। নেত্রকোণায় কোন কোন বাজারে এর চেয়েও কম দামে ধান বিক্রি হচ্ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে কৃষক দেশের চাহিদা মোতাবেক ধান উৎপাদন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সফলতা, এই অর্জন, তারা যদি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পান, তাদের মুখে যদি হাসি না থাকে, তাহলে এর চেয়ে বেদনার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এটা জাতির জন্য যেমন দুর্ভাগের বিষয়, তেমনি কৃষির জন্য এক অশনিসংকেত। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনো কৃষির সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ধান উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে শীর্ষে। কৃষির এই অভাবনীয় সাফল্যের অংশীদার কৃষক, সরকার, কৃষি গবেষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ হলেও তার সুবিধা থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের কৃষক। তাদের উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান।

বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের সাবেক সদস্য পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কৃষকদের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত ধানের বাজারমূল্য কম থাকায় কৃষক বর্তমানে দিশাহারা। প্রতি বছর লোকসান গুনে গুনে কৃষির ওপর থেকে তারা দিন দিন আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। কৃষকরা যদি এভাবে হতাশ হয়ে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাহলে খাদ্য উৎপাদন যেমন বিঘিœত হবে তেমনি খাদ্য নিরাপত্তাও হুমুকতে পড়বে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায়্যমূল্য দিতে হবে।

বাজারে বারো ধানের দরপতন ঠেকাতে সরকার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ১২৮০ টাকা মণে ধান কিনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ ঘোষণা শুধু কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। খাদ্যমন্ত্রণালয় এখনো কোথাও ধান কেনা শুরু করেনি। কিছু জায়গা সামান্য কিছু কিনলেও সেখানে প্রকৃত কৃষকরা তাদের ধান বিক্রি করতে পারছেন না। অ্যাপ জটিলতায় কৃষকরা তাদের নাম এন্ট্রি করতে পারছেন না। ফলে সরকারি ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা কৃষক সেজে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। সাধারণ কৃষক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নেতা ধরেও স্লিপ বা টোকেন পাচ্ছেন না। টোকেন ছাড়া খাদ্য কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে কৃষকের ধান নিচ্ছেন না।

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ্ জানান, সরকারী খাদ্য গোদামে ধান বিক্রিতে বিভিন্ন ঝামেলা এবং সিন্ডিকেটের কারণে নেত্রকোনার কৃষকরা স্থানীয় হাট বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে কৃষকদের মাঝে এক ধরণের হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে হাওরাঞ্চলে ধানের দাম মন প্রতি সাড়ে ৯ শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও জেলায় পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে ধাপে ধাপে ধানের দাম কমতে শুরু করে। সরকার ৭ মে থেকে অভ্যন্তরীন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। প্রতি কেজি বোরো ধানের দাম ৩২ টাকা করে মন প্রতি ১২৮০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৫ মে পর্যন্ত কোন উপজেলায় এক ছটাক ধানও ক্রয় না করায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাট বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করছে। বর্তমানে কৃষকরা স্থান ভেদে ৭ শত ৩০ টাকা থেকে ৮ শত টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। হাওরাঞ্চল ঘুরে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। এই ধান দিয়ে তাঁদের সারা বছরের খোরাকী, সংসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠান চলে। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋন নিয়ে ধান চাষ করে। কৃষকরা যখন জমিতে ধান কাটা শুরু করে তখন মহাজনরা তাদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল স্থানীয় ফাড়িয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করে। হাওরে ধান কাটা শেষ হওয়ার এক মাস পর সরকারি ভাবে খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। এ সময় বেশীরভাগ কৃষকের ঘরে তেমন ধান থাকে না। আবার অনেকেই নানা ঝক্কি ঝামেলা এবং হয়রানীর কারণে গুদামে ধান বিক্রি করতে চায় না। সরকারি নির্দেশ মেনে কৃষকরা গোদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অ্যাপসে নিবন্ধন, লটারি, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। ফলে কৃষকরা গোদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহী পয়ে পড়ে। কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক শফিকের অভিযোগ, গত বছর তিনি গুদামে ধান দিতে যান। কিন্তু সেখানে তাঁকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অ্যাপস, লটারির ঝামেলা ছাড়াও দুর্গম এলাকায় পাকা রাস্তাঘাট না থাকায় কষ্ট করে গুদামে ধান আনা, আর্দ্রতা যাচাইয়ের নামে হয়রানি, লেবার খরচের নামে বস্তা প্রতি টাকা দেওয়া, কয়েক দিন ঘুরে চেক সংগ্রহ এসবের কারণে সরকারি গোদামে ধান বেচার আগ্রহ থাকে না কৃষকদের। তাঁরা গ্রামে আগত ব্যবসায়ী কিংবা স্থানীয় বাজারেই কম দামে ধান বেচে দেন।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোয়েতাছেমুর রহমান বলেন, বোরো মৌসুমে নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলার ১৪টি খাদ্য গুদামে ২০ হাজার ৯ শত ৭৩ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ মে থেকে শুরু হওয়া ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি কেজি ধানের দাম ৩২ টাকা ধরা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ধান সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ছোট-বড় হাট বাজারে চলতি মৌসুমে বোরো ধান বিক্রি পুরোদমে শুরু হয়েছে। তবে বোরো চিকন/মোটাজাতের ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। গফরগাঁও উপজেলার ৩নং চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কৃষক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, একমণ ধান চাষ করে ঘরে আনা পর্যন্ত ১২শত টাকা থেকে ১৩শত টাকার খরচ হয়ে থাকে । অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিমণ চিকন ১হাজার টাকা ও মোটা ধান ৯শত টাকা। সরকারি ভাবে প্রতিমণ ধানের মুল্য নিধারণ করা হয়েছে ১২শত ৮০টাকা। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস সরকারি নিধারিত দামে আমরা বিক্রি করতে পারি না। বোরো ধান করতে গিয়ে আমাদের অনেক লোকসান হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রকিব-আল-রানা জানান, চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। গফরগাঁও উপজেলা থেকে সরকারি ভাবে ২হাজার ৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে। আমরা ইতিমধ্যেই কৃষকদের নামে তালিকা করে দিয়েছি। এখনো বহু কৃষক অ্যাপস সর্ম্পকে ধারনা নেই। তাদের মধ্যে সচেতনা এখনো আসেনি। এ সর্ম্পকে আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিটি ব্লকে ব্লকে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি।

কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে মু. হেলাল উদ্দিন জানান, হাওর অঞ্চল খ্যাত নিকলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাওর গুলিতে এবার কৃষক বাম্পার ফসল উৎপাদনের পর চলছে বোর ধান বিক্রয়। কিন্তু বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা হতাশ। সরকার ১২৮০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও তাতে সাধারণ কৃষক নানান জটিলতার কারণে ধান বিক্রি করতে পারছে না। ফলে এলাকার ব্যাপারিদের কাছেই কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ডুবি গ্রামের বেপারী কামরুলের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, বর্তমানে মোটা ধান ৮ শত এবং অন্যান্য চিকন দান ৯ শ’ থেকে ৯৫০ টাকা দরে ক্রয় করছেন। আলিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক জিয়াউদ্দিন বলেন, আমি এবার ১৪ একর জমিতে ধান চাষ করেছি। আমার ফলন বাম্পার হয়েছে। কোন সময় সরকারের কাছে নানা সমস্যার কারণে ধান বিক্রি করতে পারি না। এক ধরনের সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ কৃষকরা জিম্মি তাই অনেক কৃষকেরাই এলেসডিতে ধান বিক্রি করে না। ধান ক্রয় নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাখাওয়াত হোসেনের সাথে তিনি বলেন, নিকলীতে প্রতি বছরের ন্যায় এবার লটারির মাধ্যমে সরকার ধান ক্রয় করবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে কৃষকদের নামের তালিকা করা হবে। সরকারের কাছে ধান বিক্রয় ইচ্ছুক সকল কৃষকরা এই তালিকায় নাম লেখাতে পারবেন। কৃষকদের নামের তালিকা হতে সকল নাম দিয়ে উপজেলায় লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে। এবং এই লটারিতে বিজয়ী কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করা হবে।

https://dailyinqilab.com/national/article/658686