১৪ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৫৬

৫ বছরে সুদ ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ

নতুন অর্থবছরে সুদে খরচ ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা

বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারকে দেশীয় ও বিদেশী উৎস থেকে ব্যাপকহারে ঋণ নিতে হচ্ছে। এর ফলে গেল ৫ বছরের ব্যবধানে সরকারে সুদ ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন ২০১৯-২০২০ অর্থবছর সুদ খাতে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছিল ৫৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। সেখানে আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) সুদ ব্যয় খাতেই বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা অনেকখানি বাড়িয়ে এক লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে- ‘সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে উচ্চ-সুদের হার যা সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই পরিস্থিতি মধ্যমেয়াদে আরো চ্যালেঞ্জিং হবে। ’

অর্থ বিভাগ থেকে করা প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে শুধু সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

সুদ ব্যয় বেড়ে যাবার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা নমনীয় ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু টাকার অবচিতি (ডিভ্যালুয়েশন) এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ হতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এখন অনেক বেড়ে গেছে মূলত সরকারি সিকিউরিটিজের কারণে। সরকারি বিল-বন্ডের সুদ ব্যয় ১১ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশের ঘরে ওঠানামা করছে। যা কি না আট মাস আগেও ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। ফলে সরকারের সুদ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

এ দিকে, বাজেট ডকুমেন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন- ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৯০ হাজার ১৩ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

একইভাবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

একইভাবে ১৬-১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/834849