১২ মে ২০২৪, রবিবার, ৬:০৮

এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকার সড়ক

শনিবার সকালে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক, অলিগলি ও ফুটপাত। ফলে জলাবদ্ধ সড়ক মাড়িয়ে কর্মব্যস্ত মানুষকে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল খোলা থাকায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। জলাবদ্ধ সড়ক মাড়াতে গিয়ে অনেককে দুর্গন্ধ পানিতে ভিজে একাকার হতে দেখা গেছে। গতকাল সকালে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এমনটিই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, রাজধানী ঢাকায় বেশির ভাগ ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর। ড্রেনগুলো প্রায় সারা বছরই ময়লা আবর্জনায় ভরাট থাকে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সেদিকে নজর থাকে না। তবে বর্ষা এলে তোড়জোড় শুরু হয়। মূলত বছরব্যাপী ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন নিয়ে এমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা নিষ্কাশন করার মতো ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নেই। সেখানে শনিবার প্রায় দেড় ঘণ্টায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে।

গতকাল শনিবার ভোর থেকেই শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। যা চলে টানা এক দেড় ঘণ্টা। এতে মহানগরীর মিরপুর এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফুটপাতে পানি ঢেউ খেলতে দেখা গেছে। হাঁটু পানিতে ডুবে যায় মিরপুর ১০, ১১, ১৪, ২ নম্বর ও আশপাশের এলাকা। সড়কের পানি বেশি হওয়ায় যাত্রীবাহী বাস চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়। সকালে অফিস বা যে কোনো কাজে বের হওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন । একদিকে বৃষ্টি, আবার সড়কে পানি। দুইয়ে নাকাল ছিল নগরবাসী। কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টির পানি সড়কে জমে সড়ক, ফুটপাত ছাপিয়ে তা বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটেও ঢুকে পড়ে।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে অতিবৃষ্টি। আগে ঢাকাসহ দেশের ৯ অঞ্চলের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সঙ্গে বজ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল বৃষ্টির কারণে সকালে রাস্তায় মানুষও ছিল কম। একাধিক পরিবহনের চালক বলেন, প্রতিদিন সকালে যত যাত্রী পাই গতকাল অতটা ছিল না। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি।

মিরপুরের কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, দেড়-দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতেই কাজীপাড়া থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত বেগম রোকেয়া সরণিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পূর্ব কাজীপাড়া থেকে বের হয়ে মেট্রো স্টেশনের নিচে আসার আগে থেকে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গিয়েছিল। মেইন রোডের আটকে থাকা পানির পরিমাণ আরও বেশি। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের অর্ধেকেরও বেশি ডুবে যায় পানিতে। এছাড়া মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের চার পাশে হাঁটু পানি। ১০ নম্বর থেকে ১৪ ও ২ নম্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তাও তলিয়ে গেছে।

নিউমার্কেটের কয়েকজন দোকান মালিক জানান, শনিবার সকালের বৃষ্টিতে প্রধান সড়ক, ফুটপাত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি অনেক দোকানেও ঢুকে পড়ে। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিলেও কার্যত নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতার কোনো সমাধান মিলছে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ যুগান্তরকে জানান, শনিবারের বৃষ্টিতে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। সেটা কেন হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে মাঠে প্রকৌশলীরা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ বের করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/804087