১১ মে ২০২৪, শনিবার, ৫:৪৪

অস্থিরতা ও আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি ৫৭.৬৬ ভাগ বেড়েছে

উত্থান-পতনে মূলধন ফিরেছে ১২৩৫ কোটি টাকা

কোনোভাবেই স্থিতিশীল হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দুই দিন ইতিবাচক থাকলেও বাকি তিন দিনই ছিল পতনের স্রোতে। ঊর্ধ্বমুখীতার ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্থিরতা যেমন, ঠিক তেমনিভাবে পতনের ক্ষেত্রেও অস্থিরতায় এই বাজার। ফলে কোনো ধরনের বিশ^াস না থাকায় বিনিয়োগকারীরা সামান্য মুনাফায় শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। আর এ কারণে গত সপ্তাহে শেয়ার বিক্রি বেড়েছে ৫৭.৬৬ শতাংশ। পুরো সপ্তাহেই দেখা গেছে বিক্রির চাপ বেশি ছিল। যে পরিমাণ তারল্য দফায় দফায় বাজার থেকে চলে গেছে, তার বিপরীতে সপ্তাহ শেষে ফিরেছে মাত্র ১২৩৫ কোটি টাকা। বাজার পরিস্থিতির কারণে শেয়ার বিক্রির একটি বড় অংশ ফিরে আসছে না। প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার বৃদ্ধিতে বাজারের স্থিতিশীলতা হ্রাস পেয়েছে।

ডিএসইর তথ্য থেকে সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থান-পতনে বেড়েছে ৪৫.৪ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৭.৩৮ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ ১০.১৪ পয়েন্ট। তবে এসএমই সূচক কমেছে ৮.০৯ পয়েন্ট। গড়ে টাকায় লেনদেন বা বেচাকেনা বেড়েছে আগের সপ্তহের তুলনায় ৩৬.০৭ শতাংশ। আর শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল বেড়েছে ৫৭.৬৬ শতাংশ। তবে আগের সপ্তাহের তুলনায় টাকায় বেচাকেনা বেড়েছে এক হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে টাকার অঙ্কে লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৮০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ২ হাজার ৮২৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর শেয়ার হাতবদল ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার বেড়েছে। ৪১২টি কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ছিল ২৪০টি, পতনে ১২৮টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির। তবে ১৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়নি। বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন হয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।

আর চট্টগ্রাম স্টকে গেলো সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ টাকার শেয়ার। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ১৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৭ টাকা। সিএসইতে মোট ৩২৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছিল। যার মধ্যে দর বেড়েছে ২০২টির, কমেছে ১০৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির।

সিএসইর লেনদেনের তথ্য বলছে, প্রধান সূচক-সিএএসপিআই গত সপ্তাহে ছিল ১৬ হাজার ৫১ পয়েন্ট। বিদায়ী সপ্তাহে যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৩২ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ১৮০.৪৭ পয়েন্ট। সিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৭১.৯৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স বেড়েছে ১০৭.০৩ পয়েন্ট। আর এসএমই সূচক সিএসইএসএমইএক্স কমেছে ২ শতাংশ। সিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, পুঁজিবাজারে সূচকের সামান্য ঊর্ধ্বমুখিতার পাশাপাশি অধিকাংশ সেক্টরের মূল্য বেড়েছে। গত সপ্তাহে মাত্র ২ দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৫.৪ পয়েন্ট বেড়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প পরিসরে খাতভিত্তিক কিছু স্ক্রিপে সক্রিয় ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার বৃদ্ধিতে বাজারের স্থিতিশীলতা হ্রাস পেয়েছে। গড় টার্নওভার ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ১৬৭টি শেয়ারের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৮৬টি শেয়ার এর বাজার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ১৯টি খাতের মধ্যে বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ১১টি খাত এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল সেবা, বস্ত্র এবং আর্থিক প্রাতিষ্ঠান। ৭টি খাতে এই সপ্তাহে দর হ্রাস পেয়েছে। যার মধ্যে টপ লুজার ছিল পেপার ও প্রিন্টিং, সিমেন্ট এবং ভ্রমণ খাত। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে এশিয়াটিক ল্যাব সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সপ্তাহের শেষে সাইফ পাওয়ার এর দর সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরা ব্যাংকের দর সর্বাধিক হ্রাস পেয়েছে।

বিএসইসি পুঁজিবাজারে সহায়তা প্রদান ও তারল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি কম পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/834127