১১ মে ২০২৪, শনিবার, ৫:৪১

বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত দিশেহারা মানুষ

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতায় দিশেহারা মানুষ। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেই। আর বৃদ্ধি পাওয়া জিনিসপত্রের দাম কমার কোন লক্ষণ নেই। মাছ- গোশত, ডিম, সবজি ও মসলাসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম চড়া। এক কেজি বেগুনের দাম এখন ১০০-১২০ টাকা। কাঁকরোল-বরবটিরও দর একই। আর সজনে ডাটা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা দরে। এমনকি সস্তা দামে পরিচিত পেঁপের কেজিও এখন ৮০ টাকা। ডিমের হালিও এখন ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোরো ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম। মাছের কেজিও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। বেশির ভাগ জিনিসের দামই ঊর্ধ্বমুখী। ক্রেতাদের কষ্ট বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গোড়াতে দাম বেশি। তাই কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, পটল আর ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম এর ওপরে। গাজর-শসা ও টমেটোও ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে। প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বাড়ছে। এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম নতুন করে বাড়তে দেখা গেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। এছাড়া আদা-রসুন ২২০ টাকার নিচে মিলছে না। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির দামে ততটা হেরফের না হলেও সোনালি জাতের মুরগির দাম বেশ বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪১০-৪২০ টাকা। যা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৮০ টাকা বেশি। তবে ব্রয়লার ২২০-২৩০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে। আবার বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজনে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা দরে ঠেকেছে।

মুরগির দামের ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে চলমান দাবদাহে খামারের মুরগি মরে যাচ্ছে। তার পরও পোলট্রি মুরগির দাম আড়তে বাড়েনি। ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি। সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, ‘তাপে অনেক খামারের মুরগি মরে গেছে। এ জন্য সরবরাহ কমে গেছে। তার পরও দাম তেমন বাড়েনি। ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি।’ কিন্তু সেই মুরগি রাজধানীতে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে পোলট্রি মুরগি ২০০-২১০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০ টাকা বেড়ে ২১০-২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

অন্যান্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও বলেন, তাপের কারণে কয়েক দিন থেকে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বাড়ছে। ঈদের পর ডিমের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা ডজন। কয়েক দিন থেকে ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০ টাকা হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। তবে পাড়া-মহল্লায় বাজারের চেয়ে বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কমেনি। তবে বাড়েনি। বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আড়তেই বেশি দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আদা-রসুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি বলে জানান এই বিক্রেতা। আগের সপ্তাহে আদা ২০০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা। রসুনের দামও বাড়তি। আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বেড়ে ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে হাওরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। তার পরও চালের দাম কমছে না। আগের মতোই প্রতি কেজি নাজিরশাইল মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, মিনিকেট ৭২-৭৫, আটাশ চাল ৫৫-৬০ ও মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৭০-১৮০ টাকা কেজি ও বস্তার পোলাওয়ের চাল ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি।

বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১০-৮১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো ছোলা ১১০ টাকা কেজি, বেসন ১২০, খোলা চিনি ১৪০, প্যাকেট চিনি ১৪৫, দুই কেজি আটা ১১০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মসলার দামও কমেনি বলে বিক্রেতারা জানান।

সবজি বাজারে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। প্রতি কেজি সাদা বেগুনের দাম ১০০ টাকা। বড় বেগুন ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পেঁপের দাম। প্রতি কেজি পেঁপের দাম ৮০-১০০ টাকা। বাড়তি দাম কাঁচা মরিচের। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ টাকা। পটলের কেজি ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, পাকা টমেটো ৫০ টাকা, ধুন্দলের কেজি বাজারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি আকারের কলার হালি ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স বাজারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। ঝিঙের কেজি ৮০ টাকা, কচুর মুখি ১২০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া (জালি) প্রতিটি ধরনভেদে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। ৭৫০ গ্রামের বাঁধাকপি ৪০ টাকা, আধা কেজি ওজনের ফুলকপি বাজারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। রাজধানীর বাজারে ছোট আকারের রুই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি রুইয়ের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কাতলার দাম প্রায় একই। বড় রুই, বোয়াল কেটে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে।
সিলভার কার্প ১৫০ টাকা কেজি, বড় সিলভার ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই দাম চাষের পাঙাশের। সরপুঁটির কেজি ২০০ টাকা, দেশি বড় চিংড়ি এক হাজার টাকা, মাঝারি ৭০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাবদার কেজি ৪৫০ টাকা, বেলে ৭৫০ টাকা, দেশি ট্যাংরা ৭৫০ টাকা এবং চাষের ট্যাংরা বাজারভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০ ও কাচকি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টাকি ৭৫০ টাকা কেজি, শোল ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ গ্রামের ইলিশের কেজি এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। ৭৫০-৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি দুই হাজার টাকা। এরচেয়ে বড় আকারের ইলিশের কেজি আড়াই হাজার টাকা।
বিভিন্ন পণ্যের মতো মাছের বাজারেও তাপ কিছুটা বেড়েছে। টাউনহল বাজারের আবু তাহেরসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, রুই ও কাতল ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০, পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২৫০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রোজার ঈদে হঠাৎ করে গরুর গোশতের দাম ৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ঈদের পর আবার প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭৫০ টাকায় নামে। খরার কারণে কোনো কোনো বাজারে আবার বাড়তে শুরু করেছে। অধিকাংশ বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি। অন্য দিকে খাসির গোশত ১১শ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/555771