১১ মে ২০২৪, শনিবার, ৫:৩৫

জাতীয় বেকারত্ব ও শ্রমশক্তি

ইবনে নূরুল হুদা

বেকারত্ব আমাদের জাতীয় সমস্যা। সরকারের অদূরদর্শিতা ও ভ্রান্তনীতির কারণেই দেশে বেকারত্ব এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দেশে কর্মক্ষম জনশক্তির কোন অভাব না থাকলেও তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। শুধু সরকারি চাকরি দিয়েই দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই পশ্চাদপদ। দেশে সরকারি উদ্যোগে শিল্পস্থাপন একেবারে নেই বললেই চলে।

সর্বোপরি সেরকারি উদ্যোক্তাদেরও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোাষকতা করা হচ্ছে না। এমনকি দেশে চালু শিল্পকারখানাগুলোও নানাবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মজীবী মানুষও কর্ম হারাচ্ছেন। সঙ্গত কারণেই বেকারত্ব একেবারে অসহনীয় পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। আর সার্বিক পরিস্থিতি দিনের পর দিন অবনতিই হচ্ছে।

দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত বছরের শেষ তিন মাসে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিবিএস এ জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার। এক বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা ৪০ হাজার বেড়ে গেছে। যা এখন জাতির ঘারে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সঙ্কট চলছে। ডলার সঙ্কট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপে রয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদেশী বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু তার বিপরীতে প্রতিবছর শেষে কর্মক্ষম বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী চাকরির বাজারে যুক্ত হচ্ছেন। যাদের একটি বড় অংশই কাজ না পেয়ে বেকার থাকছেন। অর্থনীতির সঙ্কট ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানে। যা এখন রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অভিমত হলো, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তার বড় প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে। এখন বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে বেকার বৃদ্ধির তথ্য সেটিরই প্রতিফলন। তবে বেকারের সংখ্যা, বিনিয়োগসহ সরকারি যেসব পরিসংখ্যান রয়েছে, সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সব সময় প্রশ্ন রয়েছে।’ বিবিএস বলছে, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাদেরই বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন, তারাও বেকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। তাদের ১৩-১৪ লাখের দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। বাকিটা দেশের বাইরে প্রবাসে যান। তাই দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা ২৪-২৮ লাখের মধ্যে আছে।
বিবিএসের হিসাবে বেকারের বাইরে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে সেই সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ। যাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী, অসুস্থ, অবসরপ্রাপ্ত বা বয়স্ক লোক। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে এ সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫৫ লাখের বেশি। আর শ্রমশক্তির বাইরে থাকা পুরুষের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখের বেশি।

একথা অনস্বীকার্য যে, দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে বেসরকারি খাত। তাই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগও নষ্ট হয়। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সঙ্কট বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের পথে প্রধান বাধা। অর্থনীতির এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ার খুব বেশি সম্ভাবনা নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সরকারি বিনিয়োগে যেসব কাজ করা হয়, তাতে খুব বেশি কর্মসংস্থান হয় না। এ অবস্থায় স্ব-কর্মসংস্থানে সুযোগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণ ও শিক্ষিত যুবকেরা যাতে নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরি করতে পারেন, সে জন্য তাদের সহজে ব্যাংকঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা দরকার। আমাদের অর্থায়ন ব্যবস্থায় এ উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে আশানুরূপ বিনিয়োগের খুব বেশি সম্ভাবনা নেই। তাই ঋণসুবিধা বাড়িয়ে তরুণদের স্বকর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

সম্প্রতি প্রান্তিকভিত্তিক হিসাবের বাইরে বছরওয়ারি বেকারের একটি গড় হিসাব দিয়েছে বিবিএস। বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা বেশ কমেছে। গত বছর শেষে বেকার লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজারে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তি আছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে দেশে ৭ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ জরিপের সময়কালের আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার।

এই হিসাবের বাইরে বছরওয়ারি বেকারের একটি গড় হিসাব দিয়েছে বিবিএস। বছরওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা বেশ কমেছে। গত বছর শেষে বেকার লোকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজারে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। বছরওয়ারি হিসাবে, গত বছর শেষে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তি আছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে দেশে ৭ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ জরিপের সময়কালের আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার। বিবিএসের হিসাবে, গত ডিসেম্বর শেষে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ৩ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেন। শিল্পে এ সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার আর সেবা খাতে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার। বর্তমানে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার আছেন। ২০২৩ সাল শেষে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। এর মানে গত বছরের তুলনায় এখন দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি।

এ দিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। বিবিএস হিসাব অনুসারে, গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার।
বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তারা মূলত সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।

গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেকার বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ। বছরের প্রথম তিন মাসে নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যদিও বাস্তবে এই বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার, যা তার আগের প্রান্তিক অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৩ লাখ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার। বিবিএস বলছে, সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি; কিন্তু কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাদেরই বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি জরিপের আগে ৩০ দিন বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে যারা কাজ খুঁজেছেন, তারাও বেকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। শ্রম বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্ব হিসাবের এই পদ্ধতিতে গলদ রয়েছে। এই সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো, বিবিএস বেকারত্বের যে হিসাব দেয় তা সঠিক নয়। তাদের সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসেবে সামনে আনা জরুরি।

বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত বেকার। অথচ যাদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাদের বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। অর্থাৎ মানসম্মত শিক্ষার অভাবেই দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি বাড়ছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা বেকারের হার ৮.৭৮ শতাংশ। মাধ্যমিক শেষ করা বেকারের হার ২.৪২ শতাংশ। প্রাথমিক শেষ করা বেকারের হার ১.৬৯ শতাংশ। আর অন্য কোনো মাধ্যমে যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছে তাদের বেকারত্বের হার ৪.৮৭ শতাংশ।

শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে দেশের শ্রমশক্তিতে আছেন সাত কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ চার কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী দুই কোটি ৫৩ লাখ। তিন মাস আগে মোট জনসংখ্যার মধ্যে শ্রমশক্তিতে ছিল সাত কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার।

জনগোষ্ঠী বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে থাকা জনসংখ্যার মধ্যে কর্মে নিয়োজিত নারী-পুরুষের সংখ্যা সাত কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার। সেই হিসাবে শ্রমশক্তিতে থাকা বাকিরা বেকার। তিন মাস আগে কর্মে নিয়োজিত ছিল সাত কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ হাজার। কিন্তু একই সময়ে দুই লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়ায় বেকার বেড়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার।

বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ৩.৫১ শতাংশ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের হার ৩.৫৯ শতাংশ, নারী বেকারের হার ৩.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ নারী বেকারের চেয়ে পুরুষ বেকার হার ০.২৩ শতাংশ বেশি। এদিকে বেকারের বাইরে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছে, যাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী, অসুস্থ ও অবসরপ্রাপ্ত।

বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী বেকারত্বের সময় সময় কিছুটা ওঠানামা করলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় তা ক্রমবর্ধমান। আর দেশের বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী যে এখনো কর্মহীন ও বেকারত্ব অভিশাপে নিমজ্জিত রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ক্রমবর্ধমান জনশক্তিকে দেশ ও জাতির বোঝা মনে করা হলেও এমন বক্তব্য পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয় বরং প্রত্যেক মানুষের দু’টি হাতকে কর্মের হাতিয়ারে পরিণত করা গেলে তা অবশ্যই মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

তাই দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি পর্যায়ে শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও পৃষ্ঠপোষকতা করা দরকার। একই সাথে দেশের বেকার জনগোষ্ঠী যাতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে সেদিকেও সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে ক্রমবর্ধমান শক্তি জাতির জন্য বোঝা নয় যদি তাদের প্রত্যেকের হাতকে কর্মের হাতিয়ারে পরিণত করা যায়। জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করা গেলে দেশ ও জাতি সুখী, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে! জাতিও মুক্তি পারে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে।

https://www.dailysangram.info/post/555768