১ মে ২০২৪, বুধবার, ১১:১২

মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট

এপ্রিলে নির্যাতন-হয়রানির শিকার ৪৭ সাংবাদিক

গত এপ্রিল মাসে অন্তত ২৭টি হামলার ঘটনায় ৪৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন, হুমকির শিকার ৬ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৮ জন এবং ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ২০ জনেরও বেশি সংবাদকর্মী আহত হন।

আশঙ্কাজনকভাবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে দায়ের করা ৭টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ৩১ জনকে।

বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে এপ্রিল মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটি প্রতিবেদন তুলে ধরে জানায়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অনেক সাফল্য অর্জন করলেও আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা সমাবেশ করার অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর অধিকারসহ সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাসজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং গ্রেফতার, নির্বাচনী সহিংসতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গণপিটুনিতে নিরীহ শ্রমিক হত্যা, সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী নির্যাতন ও হত্যার মতো বিভিন্ন ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এপ্রিল মাসে ৫৪টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯৯ জন। যার অধিকাংশই আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও অঙ্গসংগঠনের অন্তর্কোন্দল সংঘর্ষে এবং নির্বাচনী সহিংসতায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ১৩ জনের মধ্যে ১১ জনই সরকারি দলের নেতা ও কর্মী। তা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা কমপক্ষে ১৬২ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী গ্রেফতারের শিকার হন, তন্মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ১০৩ জন। এটি উদ্বেগজনক যে, এপ্রিল মাসে নির্বাচনী সহিংসতার অন্তত ১৮টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। নিহত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই সরকারি দলের নেতাকর্মী। অধিকাংশ ঘটনাই চলমান ইউপি নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। এ ছাড়াও এ মাসে কারাগারে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এপ্রিল মাসে ৩৭টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৫ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৭ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। ফরিদপুরের মধুখালীতে স্কুলের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণকারী তরুণ শ্রমিকদের ওপরে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে আক্রমণ করা হয় এবং এতে দুইজন শ্রমিক নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়াও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ৯টি হামলার ঘটনায় পাঁচজন বাংলাদেশী নিহত, আহত ৩ ও ১ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

এপ্রিল মাসে ১৪৮ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭২ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৪৪ জন (৬১%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, ১৭ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২ শিশুকে এবং আত্মহত্যা করেছেন ১ জন। ২৮ জন নারী ও কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ১৪ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২১ জন, আহত হয়েছেন ১ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১ জন। অন্য দিকে এটি উদ্বেগজনক যে, ১২২ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৮২ শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, রিপোর্টে বর্ণিত পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। এ অবস্থায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে। তাই ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’র পক্ষ থেকে সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং দেশের সব সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/831861