১ মে ২০২৪, বুধবার, ৬:৩০

২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো দেশবাসী

গত ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো দেশবাসী, যা ১৯৭২ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ওঠেছে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরআগে, ১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। আর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের ১৮ মে, ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর টানা ৩১ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড। তবে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের আভাস দেখছে আবহাওয়া অফিস।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, মঙ্গলবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, মোংলায় ৪২ ডিগ্রি, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমে বিপাকে পড়েছেন কৃষক, দিনমজুর, যানবাহন চালকসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই বাইরে বের হতে হচ্ছে। শহরের কাজীপাড়া আমতলা মোড় এলাকার রিকশাচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বাইর প্রচুর গরম। রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এই গরমে রিকশা চালাতে পারি না। ছিটের নিচে পানি রাখি, বার বার হাতমুখে পানি দেই। যশোর সদর উপজেলার চাচড়া নারায়নপুর গ্রামে হরিণা বিলে ধান কেটে ঘরে তুলছিলেন দিলদার মোল্লা। তিনি বলেন, এই গরমে রোদে থাকা অনেক কষ্টের। এরপরও কষ্ট করে ধান কাটতে হচ্ছে।

এদিকে তাপজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ডায়েরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, টাইফয়েড নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এ সকল রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দাবদাহ থেকে সুস্থ থাকতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, দাবদাহ থেকে সুস্থ থাকতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। বের হলেও ছাতা ব্যবহার করতে হবে। বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কোনোরকম তাপজনিত অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এদিকে হিটস্ট্রোকে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে সারা দেশে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সারা দেশে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া এ ১০ জনের মধ্যে ৮ জন পুরুষ, ২ জন নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, হিট স্ট্রোকে নতুন করে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুর জেলায়। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মারা গেছেন। এছাড়া গতকালও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

অবশেষে বৃষ্টি আসার বার্তা দিলো বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির আভাস রয়েছে। সেইসাথে আগামী ৫ দিনের মধ্যে চলমান তাপপ্রবাহ কমে বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তাপপ্রবাহ নিয়ে সংস্থাটি জানায়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গা হতে প্রশমিত হতে পারে। এছাড়া, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলের রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে ও দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

২ মে যেমন থাকবে আবহাওয়া
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহের তীব্রতা হ্রাস পেতে পারে এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে তা কিছু কিছু জায়গা হতে প্রশমিত হতে পারে। এছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং অন্যত্র তা সামান্য হ্রাস পেতে। দেশের পূর্বাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে সারা দেশে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বিস্তারলাভ করতে পারে।

মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে দুইজনের মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ সদরের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে হিট স্ট্রোকে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে তাদেরকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃতরা হলেন- সদর উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ মোল্লারচর এলাকার ওমর আলী (৬৫) ও একই উপজেলার মানিকপুর এলাকার আব্দুল বাতেন মাঝি (৬৮)।

বৃদ্ধ ওমর আলী সকালে অন্যান্য কৃষকদের সঙ্গে মোল্লার চর এলাকায় কৃষি জমিতে কাজ করছিলেন। কৃষি জমিতে কাজ করা অবস্থায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তার সঙ্গে কাজ করতে থাকা অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে আব্দুল বাতেন মুন্সীগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি জন্য এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শৈবাল বসাক বলেন, দুই বৃদ্ধ প্রচ- গরমে জ্ঞান হারিয়ে মারা গেছেন। যাকে আমরা হিট স্ট্রোক বলি। এক বৃদ্ধ মোল্লার চর এলাকায় কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। অপরজন মুন্সীগঞ্জ সদর রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান । তিনি আরও বলেন, আজকে আরও দুই নারী, এক শিশু ও অপর এক পুরুষ হিট স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা এখন অনেকটাই সুস্থ আছে।

সিরাজগঞ্জে কৃষকের মৃত্যু : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ধান কাটতে গিয়ে ‘হিট স্ট্রোকে’ এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উল্লাপাড়ার চর তারাবাড়িয়া মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষকের নাম জিল্লুর রহমান (৩৫)। তিনি চর তারাবাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। সলপ ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান জানান, জিল্লুর রহমান তারাবাড়িয়া মাঠে ধান কাটছিলেন। প্রচ- তাপদাহে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে উল্লাপাড়া কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথে তিনি মারা যান।

উল্লাপাড়ার কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আলামিন হোসেন জানান, জিল্লুর রহমানকে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইসিজিও করা হয়। পরে তার অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নাটোরে হিটস্ট্রোকে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু
ছুটিতে দেশে এসে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন সৌদি আরব প্রবাসী খায়রুল ইসলাম (৫০)। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, ১৫ দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন খায়রুল ইসলাম। আজ সকালে খেত থেকে ভুট্টা তুলতে যান তিনি। এসময় জমিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন খায়রুল। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে খাজুরা বাজারে পল্লী চিকিৎসক ডা. খোরশেদ আলমের কাছে নিয়ে যান। এসময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত ব্যক্তিকে দেখতে একজন স্বাস্থ্যকর্মী গিয়েছিলেন। লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তিনি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।

হিটস্ট্রোকে মুন্সীগঞ্জ আরো দু’জনের মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জ থেকে মমিন বিশ্বাস : তীব্র তাপপ্রবাহে মুন্সিগঞ্জ সদরে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে একজন ও বেলা ১১টা ১০ মিনিটে অন্যজনের মৃত্যু হয়।

মৃতরা হলেন মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মোল্লারচর এলাকার বাবু বারী হাজারির ছেলে ওমর আলী ও মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা বাতেন মাঝি।মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শৈবাল বসাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতাল ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, বাতেন মাঝি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। আজ তিনি জমি বিক্রির কাজে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।অন্যদিকে কৃষক ওমর আলী জমিতে কাজ করতে গিয়ে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান।মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শৈবাল বসাক জানান, দুজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। মরদেহে হিট স্ট্রোকের সিম্পটম ছিল। মূলত তীব্র গরম সহ্য করতে না পারাই এই মৃত্যু।

যশোরে তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এবারের এপ্রিল মাসটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ মাস। এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু মাসজুড়েই সারাদেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রির ওপরে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এতদিন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। মঙ্গলবার তা ভেঙে গেল। আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

চুয়াডাঙ্গায় ৪০ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভঙ্গ করে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গা এখন শীত কিংবা গরমে প্রতিদিনই তাপমাত্রার নিত্য নতুন রেকর্ড গড়ছে। তবে এবারের গরমে বিগত ৪০ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সকল রেকর্ডকে পিছনে ফেলে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রির নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় ও সন্ধা ৬টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আদ্রতা ছিল ১২ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নধিভুক্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে চুয়াডাঙ্গায় ১৯৮৫ সালে ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর চুয়াডাঙ্গায় আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের পর ২০১৪ সালে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০২৩ বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়বিদদের মতে ভৌগলিক কারনেই সব সময় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বেশি থাকে, এই এলাকা ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের পাশে। বর্তমানে ওই এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে। সংগত কারনেই এর ছোয়া এখানে লেগেছে। তাদের মতে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা এই অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি এবং পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সমভূমি। ফলে তাপমাত্রা প্রবাহের তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়। ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে।

চলতি মৌসুমে টানা ২২ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে। কখনও তীব্র আবার কখনও খুব তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। এতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য নেই। দিনের আলো ফোটার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিবেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হচ্ছে রোদের উত্তাপ। আবার সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তীব্র হচ্ছে গরমের অনুভূতি। বৃষ্টির পানির জন্য হাহাকার করছে মানুষ।

তীব্র রোদ আর লু হাওয়ার কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অনাহারে দিন পার করছে। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরী প্রয়োাজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছে।

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে তীব্র দাপদাহের কারণে রাজশাহী জেলার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহত রয়েছে তীব্র তাপদাহ। এতে জনজীবন নেমে আসে স্থবিরতা। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াম। বাতাসের আদ্রতা ১৮ শতাংশ। এর আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী আরো কয়েকদিন একই রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।

এদিকে তীব্র তাপদাহের কারণে দিনমজুর থেকে শুরু করে সব শ্রেনী-পেশার মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বেশীর ভাগ মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তীব্র দাপদাহের কারণে রাজশাহীসহ আরো ৫টি জেলার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলেজ গুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় অভিভাবকরা স্বস্থি প্রকাশ করেছেন।

https://www.dailysangram.info/post/555001