৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:০৮

বন্ধ হচ্ছে টেলিটক টাওয়ার প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জমি দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ড তৈরির কারণে অসমাপ্ত রেখেই বন্ধ হচ্ছে টেলিটক টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প। যে স্থানে টাওয়ার নির্মাণের কথা ছিল, সেখানেই তৈরি হবে ট্রাক স্ট্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইতোমধ্যেই প্রকল্পের আওতায় খরচ হওয়া ২৬ লাখ ১১ হাজার টাকার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অডিটের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তেজগাঁওয়ে বিকল্প জায়গা টেলিটকের না থাকায় নতুন করে টাওয়ার নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি তেজগাঁওয়ে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সেখানে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের কাছে জমিটি চাওয়া হয়। আমরা নামমাত্র মূল্যে সেটি দিয়ে দিয়েছি। ফলে তারা সেই জমি উত্তর সিটি করপোরেশনকে দিয়েছে। এ কারণে তেজগাঁওয়ে প্রকল্পটি আর করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে টেলিটক টাওয়ার নির্মাণের জন্য এখন নতুন করে জায়গার অনুসন্ধান চলছে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, দেশের টেলিকম খাতের বিভিন্ন সংস্থাকে একই ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। ছোট টেলিকম ব্যবসায়ীরাও এখানে সুবিধা নিতে পারবেন। এজন্য ‘টেলিকম টাওয়ার নির্মাণ’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটি হতো দেশের প্রথম টেলিকম টাওয়ার। প্রায় পাঁচ একর জায়গায় এই টাওয়ারটি তৈরির কথা ছিল বিটিসিএল-এর। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশে নিজস্ব জমি টাওয়ারের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। টাওয়ার নির্মাণের অর্থায়ন বিটিসিএল-এর নিজস্ব তহবিল থেকে হতো। কিন্তু সেটি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী জায়গাটিতে ট্রাক স্ট্যান্ড হবে। এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিটিসিএল-এর পরিচালনা পর্যদের ২১৩তম সভায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পের মূল ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (আন্তর্জাতিক) নিয়োগের চলমান কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই সভায়। এর আগে এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি), পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) এবং পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) সভায়ও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বিধি মোতাবেক অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণার জন্য পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্র মেনে আরডিপি (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিসিএল।

সূত্র আরও জানায়, ডিপিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্পটির অনুকূলে ৩৫ লাখ ১২ হাজার টাকা অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৬ লাখ ১১ হাজার টাকা। বাকি অর্থ বিটিসিএল-এর অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রকল্পে কোনো বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। সেই সঙ্গে কোনো বাজেট চাহিদাও দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে যেসব ব্যয় হয়েছে, তার উপর বিটিসিএল-এর একটি ইন্টারনাল অডিট করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কক্ষ এবং কেনা আসবাবপত্র বিটিসিএলকে হস্তান্তর করতে হবে। সেই সঙ্গে একটি প্রকল্প সমাপ্তকরণ প্রতিবেদন (পিসিআর) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/800103