২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১২:১৩

মুরগি আলু পেঁয়াজ ও সবজির দাম বৃদ্ধি ঈদের পরও নিত্যপণ্যের বাজার চড়া

ঈদের পর সপ্তাহের বেশি সময় চলে গেলেও নিত্যপণ্যের বাজার এখনো চড়া রয়ে গেছে। বাজারে ক্রেতাদের ভিড় না থাকলেও জিনিসপত্রের দাম কমছে না। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিল। কিন্তু এখনো দাম কমেনি। রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। অপর দিকে বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ ও সবজির দাম। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা দরে। কোথাও কোথাও কেজি ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকার আশপাশে। সেই হিসেবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। অন্যদিকে, পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া মুরগির দাম এখনো বেশি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত অন্য সময়ে এ ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে থাকে। দেশী মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর গোশত ৭৮০ টাকা, খাসির গোশত ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ঈদের পর বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। ঈদের আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি নেমেছিল ৫০ টাকার ঘরে। কেজি কেনা গেছে ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। কিন্তু ঈদের পর চড়া হতে থাকে দাম। কয়েক দফায় বেড়ে এখন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পেঁয়াজের মতো দর বেড়েছে আদা-রসুনেরও। বাজারে এখন আমদানি করা প্রতি কেজি চায়না রসুন ২২০ থেকে ২৩০ এবং দেশি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে চায়না রসুন ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, চায়না আদার কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সয়াবিন তেলের নতুন দাম ঘোষণা করেন। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম চার টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে খোলা সয়াবিনের লিটারে কমানো হয়েছে দুই টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলে দর বেড়েছে ১৮ টাকা। ফলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৬৭, পাঁচ লিটারের দর হবে ৮১৮ এবং খোলা সয়াবিনের লিটার হবে ১৪৭ টাকা। অন্যদিকে, সুপার পামওয়েলের লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। তবে সুপার পামওয়েল বাজারে এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে।

ঘোষণা হলেও বাজারে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি। অর্থাৎ আগের দামে চার টাকা কমে তেল কেনা যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যেই নতুন দামের তেল সরবরাহ করবে কোম্পানিগুলো। রাজধানীর সবজি বাজারও চড়া। রোজার সময় দাম কমলেও ঈদের পরে সবজির বাজার রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল শুক্রবার বাজারে টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৬০ টাকা, দেশী গাজর ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, সজনে ১০০-১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছু সবজির দাম কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা ও গরম বাড়ার কারণে সবজির দামও বাড়ছে। অনেকদিন মানুষ কম দামে সবজি পেয়েছে, এখন কিছুটা বাড়বে। আর গরমের কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়, এটাও দাম বাড়ার একটা কারণ। বৃষ্টি হলে সবজির আরও দাম বেড়ে যাবে বলে তারা জানান।

মাছের বাজারেও দাম চড়া। ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০- ২০০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে ছোট মুগডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা।

মুগডাল ছাড়া মুদি দোকানের সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। গতকাল প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৯০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজির প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/554018