চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে হজ ব্যবস্থাপনা। এখনো বেসরকারি হাজীদের জন্য বাড়ি ভাড়া করা যায়নি। এজেন্সী প্রতি কোটা বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত সেবা অনিশ্চিত। নির্ধারিত সময়ে হজ ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে বড় ধরনের সমস্যার আশংকা করছে হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সংগঠনটি এ জন্য দোষারোপ করছে ধর্মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবেই চলছে বলে দাবি করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়।
চলতি বছরে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ হতে পারে ১৬ জুন। তিন সপ্তাহ পরে ৯ মে শুরু হবে হজ্জ ফ্লাইট। কিন্তু এখনো বেসরকারী হাজীদের বাড়িভাড়া করা সম্ভব হয়নি। মুনাজ্জেম ভিসা না পাওয়ায় সৌদি আরবে যেতে পারছে না এজেন্সীগুলো। আর সৌদি আরবের এজেন্সীর একাউন্টে সময় মতো রিয়াল না পাওয়ায় হজের ব্যবস্থাপনা বিলম্ব হচ্ছে। অবিলম্বে এসব বিষয়ের সমাধান না করলে হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। কোনও হাজি যেন হজে গিয়ে কষ্ট না পান, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে হাবের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মো: মতিউল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, হাবের অভিযোগ সঠিক নয়। এজেন্সী মালিকরা সবাই সৌদি আরবে চলে গেছেন। সময় মতোই বাড়ি ভাড়া করতে পারবে। ব্যবস্থাপনায় কোন ধরনের ত্রুটি নেই। সৌদি সরকার এবার মুনাজ্জেম ভিসা ইস্যু করবে না। এজন্য এজেন্সী মালিকদের ব্যবস্থাপনার ভিসায় সেখানে গিয়ে কাজ করতে হবে।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে গত মঙ্গলবার রাতে হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা করে হাব। এই আলোচনা সভায় সারা দেশের হজ এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনি¤œ ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা স্বত্বেও কি কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জনের কোটা রাখার নির্দেশনা দেওয়া স্বত্বেও ধর্ম সচিব ৫০০ জনের কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজিদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘœ ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনও হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তারপরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির বাড়ি ভাড়ার জন্য সৌদি যেতে ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব?’
হাব সভাপতি আরো বলেন, ‘হজযাত্রীদের মীনায় অবস্থানের লোকেশন এবং সার্ভিস প্রোভাইডার এখনও নির্ধারণ হয়নি। ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল আজ পর্যন্ত প্রকাশ না হওয়ার কারণে এজেন্সি বাড়ি ভাড়া বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনও সহায়তাকারী নেওয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নেওয়া হচ্ছে।’
তসলিম বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনও বেসরকারি হজ যাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজির জন্য এই বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেওয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজি যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’
সভায় আরও ছিলেন, হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।
হাবের হজ ব্যবস্থাপনার অভিযোগ সর্ম্পকে মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মো: মতিউল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, হাব যেসব অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। ইতোমধ্যে এজেন্সী মালিকরা সবাই সৌদি আরবে চলে গেছেন। তারা সেখানে গিয়ে বাড়ি ভাড়ার কাজ করছেন। এ বছর সৌদি সরকার মুনাজ্জেম ভিসা ইস্যু করবে না। তাই এজেন্সী মালিকরা অন্য ভিসায় সৌদি আরবে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার ভিসায় সেখানে গিয়ে কাজ করতে হবে।
ব্যবস্থাপনায় কোন ধরনের ত্রুটি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার হাজীদের সেবায় প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজ করছে। এতে কোন ত্রুটি নেই। এজেন্সী প্রতি হাজীদের কোটা ৫০০ই বহাল থাকবে। এ বিষয়ে সৌদি সরকারেরও সিদ্ধান্ত এটি। কেননা মানসম্মত এজেন্সীগুলো হাজীদের ভালোভাবে সেবা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে হাজীর সংখ্যা যতই হোক মান সম্মত এজেন্সীগুলোর সঠিক সেবা দিতে কোন সমস্যা হয় না। আর যে সকল এজেন্সী ভালো সেবা দিতে পারে না তারা ১০০ হাজীর সেবাও ভালোভাবে দিতে পারে না। এ সংক্রান্ত অভিযোগ প্রতি বছরই আমাদের কাজে হাজীরা করে থাকেন। একশ থেকে দেড়শ এজেন্সীর বিরুদ্ধে ভালোভাবে সেবা না দেয়ার অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। সুতরাং এজেন্সী কোটা কমানোর সুযোগ নেই।