১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:১০

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

ইসরাইলের ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণের পর নানা প্রশ্ন

ইসরাইলের তেল আবিব থেকে দুটি ফ্লাইট সম্প্রতি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ইসরাইল থেকে সরাসরি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করার পর পরই এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ঢাকার একাধিক পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত ১১ এপ্রিল ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় রওনা হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশে অবতরণ করে একটি ফ্লাইট। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এনসিআর-৮০৬ নম্বর ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। এটি একটি কার্গো উড়োজাহাজ যা একসাথে ১০৮ টন মালামাল নিতে সক্ষম।

সূত্র জানায়, ফ্লাইট দুটি অবৈধভাবে দেশে অবতরণ করেনি। সব ধরনের নিয়মকানুন মেনেই ফ্লাইট দুটি অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই ফ্লাইটে কোনো যাত্রী বা মালামাল ছিল না। তেল আবিব থেকে আসা সরাসরি ফ্লাইটের বিষয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাইল থেকে ফ্লাইট আসার তথ্যটি সঠিক। তবে ফ্লাইটটি ফাঁকা ছিল। বাংলাদেশে নামানোর মতো কিছু ছিল না। তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। এয়ারক্রাফটিও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধন নেয়া। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এএসএ) রয়েছে। তাদের ফ্লাইট অবতরণে কোনো বাধা নেই। মূলত ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট দুটি বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) পণ্য নিয়েছে। এয়ারলাইন্স দুটি এই পণ্য শারজাহ এবং ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশীদের ইসরাইলে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা আছে। জাতিসঙ্ঘভুক্ত যে ২৮টি দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।

এ দিকে ইসরাইলের তেল আবিব থেকে সম্প্রতি দুটি ফ্লাইট সরাসরি ঢাকায় অবতরণ করার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে গত শনিবার সংবাদমাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (বেবিচক) উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ সোহেল কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘ইসরাইল থেকে বিমান এলো ঢাকায়’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরী পোশাক মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৭ এপ্রিল দুটি বিমান তেল আবিব থেকে উড্ডয়ন করে সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে ও কার্গো নিয়ে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে এবং অপরটি গত ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকায় অবতরণ ও মধ্যরাত সাড়ে ১২টায় কার্গো নিয়ে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে। দুটি বিমানই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত এবং ওই দেশের বিমান সংস্থা ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের।’

সিভিল এভিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, থ‘বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বিমান চলাচল চুক্তি অনুযায়ী কার্গো ফ্লাইট দুটি ঢাকা এসেছিল। ঢাকা থেকে তৈরী পোশাক নিয়ে ফ্লাইট দুটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এবং ইউরোপের একটি গন্তব্যে গিয়েছে। বাংলাদেশ ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো বিমান চলাচল চুক্তি নেই এবং ইসরাইলের কোনো বিমান বাংলাদেশে অবতরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘ইসরাইল থেকে বিমান এলো ঢাকায়’ শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রকাশের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনা অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসাবে বিবেচ্য। এরূপ সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয় পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/828244