৫ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১০:২২

এলাচের ‘সুগন্ধ’ কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে

এবার রমজানের আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। রোজার শুরুতে বাজার আরও তেতে ওঠে। সব কিছুর আকাশছোঁয়া দামের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শাকসবজি, মাছ-মাংসের পর এবার ঈদের আগমুহূর্তে এসে মসলার ঝাঁজ বেড়েছে। মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সুগন্ধী এলাচের। ১৪০০ টাকার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩৩৫০ টাকায়; যা দ্বিগুণের বেশি।

গত বুধবার রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাচের দাম কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা পর্যন্ত। সেইসঙ্গে দারুচিনি, গোলমরিচ, সাদামরিচ, লবঙ্গসহ সব ধরনের মসলার দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত রমজানে যে এলাচ ১৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি ছিল, এবার তা আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৫২০ থেকে ৫৮০ টাকায়; ৪০০ টাকার কিশমিশ ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকায়; ১ হাজার ৫০০ টাকার লবঙ্গ ১৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কম থাকা কালো গোলমরিচ ৮২০ টাকা, সাদামরিচ ১ হাজার ২২০ টাকা, আলুবোখারা ৫৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে কাঠবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়, কাজুবাদাম ১ হাজার ১৮০ এবং পেস্তাবাদাম ৩০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু দোকানে এর বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স রুবেল ট্রেডার্সের মো. রুবেল বলেন, ‘দুই-আড়াই মাস আগে যে এলাচের কেজি দেড় হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ২৬০০; আর যেটা ১৪০০ ছিল, তার কেজি এখন ২৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আরেকটা এলাচ ছিল আড়াই হাজার টাকা কেজি, সেটা এখন হয়েছে ৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে এক-দেড় হাজার টাকা দাম বেড়েছে। কালো মরিচ, কাঠবাদাম, সাদা মরিচ এগুলো কেজিপ্রতি এক-দেড়শ’ টাকা বেড়েছে। পেস্তাবাদামে বেড়েছে ৬০ টাকা। এক দিনে দুইশ টাকার বেশি বেড়েছে কাজুবাদামের দাম। শুধু মসলার মধ্যে জিরাসহ দু-একটার দাম কমেছে। ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকার জিরা এখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মেসার্স হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ম্যানেজার বিল্লাল হোসেন বলেন, দুই মাস আগে থেকেই মসলার দাম ওঠানামা করছে। কিন্তু হঠাৎ করে এলাচের দাম এত বাড়ার কারণ চাহিদা বেশি ও অপর্যাপ্ত সরবরাহ। তবে আমদানি বাড়লেই দাম কমবে।

মসলার খুচরা বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, মসলা খুচরা পর্যায়ে ১০, ২০ বা ৫০ টাকার বিক্রি হয়। আবার কেউ ১০০ গ্রাম বা সর্বোচ্চ আড়াইশ গ্রাম নেয়। আমরা সেই হিসাবে পাঁচ থেকে ১০ টাকা লাভ করি। গতবার আমরা যে দামে মসলা কিনেছি, এবার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিপ্রতি বেশিতে কিনতে হচ্ছে। পাইকারি দামের ওপর আমাদের বেচাকেনা। পাইকারিতে কম দামে পেলে আমরাও কমে বেচতে পারব।

তবে অনেক দোকানেই মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়নি। মেসার্স নরসিংদী স্টোরের বিক্রেতা ওহাব নাঈম বলেন, ‘মূল্য তালিকা আছে, কিন্তু একটু ব্যস্ত আছি। এ জন্য দেখাতে পারছি না।’ তালিকা দোকানের সামনে উন্মুক্ত রাখার কথা—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকানে আপাতত সবাই ব্যস্ত। কাজ করতে গিয়ে হয়তো কর্মচারীরা অন্য জায়গায় রেখেছে।’
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। আজাদ নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি টঙ্গী থেকে আমার দোকানের জন্য পাইকারি দরে মসলা কিনতে এসেছি। এখানকার বেশিরভাগ দোকানেই মূল্য তালিকা নেই। আর থাকলেও সেটা ক্রেতারা দেখেন না। ম্যাজিস্ট্রেট এলে কোনোরকম তাড়াহুড়ো করে একপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, পান থেকে চুন খসলেই আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের শাস্তি হয়; কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ম না মানলে দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হতে দেখিনি।

https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/lastpage/78609