৪ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩১

কাটছাঁটেও ক্রেতাদের ঈদ বাজেট সঙ্কুলান হচ্ছে না

ঈদের আগ মুহূর্তে মার্কেটে বিক্রি নিয়ে বিক্রেতারা সন্তুষ্টি জানালেও দাম নিয়ে ক্রেতারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কাপড়ের বাড়তি দামে কাটছাঁটেও বাজেট সঙ্কুলান সম্ভব হচ্ছে না। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর রাজনৈতিক নানান অস্থিরতার প্রভাব বাজারে পড়েছিল তাই বিক্রি তেমন ভালো হয়নি। এবার তা নেই। তাই ঈদে আগ মুহূর্তে এখন বিক্রি ভালো হচ্ছে। আশা করা যায় বিগত সময়ের লোকশান পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

অপর দিকে বাড়তি দামে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিটি কাপড়ে দাম বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। যার কারণে শপিংয়ে এসে বাজেট সঙ্কুলান হচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, আগে চারজনের পরিবারে যে টাকায় ঈদ বাজার হতো এখন তা দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ বেতন-বোনাস তো বাড়েনি। যার কারণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। এতে মার্কেটে এসে দাম দেখে তারা অসহায়বোধ করছেন। কাটছাঁটেও তাদের বাজেট সঙ্কুলান হচ্ছে না।

নিউ মার্কেটে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আসা আজহার বলেন, ‘ভাই ঈদ বোনাস পেয়ে আজ প্রথম মার্কেটে এসেছি। এখন কাপড়ের দাম দেখে তো বোকা হয়ে গেছি। কী করব, কার জন্য কী কিনব, আর কারটা বাদ দেবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। কারণ আমার যে বাজেট তাতে গত বছরও কোনোমতে সঙ্কুলান হয়েছে। কিন্তু এবার মার্কেটে এসে দেখি গতবারের চেয়ে তা প্রায় দেড় গুণ বাড়াতে হবে। এখন কোথা থেকে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। কারণ আমি চাকরিজীবী। বেতন-বোনাস কোনোটাই বাড়েনি। কিন্তু ব্যয়তো বেড়েছে। শেষমেষ নিজের বিষয়টি বাদ দিয়ে বাজেট কাটছাঁট করেও যদি সঙ্কুলান হয় তার চেষ্টা করছি।’

লোকমান হোসেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে জানালেন। একাধিক মার্কেট ঘুরে শেষমেষ এসেছেন নিউ মার্কেট। তার ভাষ্য এক সন্তানসহ তিনজনের পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বিকেলে বেরিয়েছেন শপিং করতে। সাথে স্ত্রী ও সন্তান। প্রথমে যান বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে। সেখানে গিয়ে কাপড়ের দাম দেখে সাহস হারিয়েছেন। তাই বসুন্ধরা ছেড়ে এসেছেন মেট্রো শপিংমলে। এখানেও একই অবস্থা। দাম বেশি বাজেট ফেল। সবশেষে একটু কম দামের আশায় এসেছেন নিউ মার্কেটে। কিন্তু এখানেও দাম খুব যে কম তাও না। তাই সবশেষে যেভাবেই হোক বাজেট সঙ্কুলানে চাহিদায় যোগ-বিয়োগ করে শপিং করেছেন। তিন জনের জন্য প্রায় ১৮ হাজার টাকা লেগেছে।


আক্ষেপ করে বললেন, ‘ভাই কী বলব। লজ্জাও লাগে। সামান্য একটা চাকরি করি। সে হিসেবে আমার জন্য এই টাকাও অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত আমি। তাই কারো কাছে বলতেও পারছি না। সইতেও কষ্ট হচ্ছে। এখন সামনে কিভাবে চলব জানি না। সব কিছুর দাম এরকম লাগামহীন চলতে থাকলে এক সময় আমাদের মতো মানুষের ঈদ বাজার বলে কিছু থাকবে না।’

বসুন্ধরা মার্কেটে নিউ পল্টন থেকে আসা রোকসানা জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরেও শাড়ি কিনতে পারেননি। তার ভাষ্য, বাড়তি দামের কারণে বাজেটের বাইরে হওয়ায় অনেকে পছন্দের কাপড় কেনা সম্ভব হয়নি।

কাকরাইল থেকে আসা লোকমান হোসেন বলেন, ‘প্রতিবার ঈদে পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের জন্য নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করি। এখানে অনেক মার্কেট আছে। পছন্দমতো ঘুরে কেনাকাটা করা যায়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বেশি মনে হচ্ছে, যা বাজেট করে নিয়ে আসছিলাম তা দিয়ে সবার কাপড় কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে কেনাকাটা করতে এসে যানজটে ভোগান্তি অভিযোগও করেছেন অনেকে। তারা বলছেন শপিংয়ে আসা মানুষ কোনো নিয়ম মানতে চান না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, রিকশা থেকে উঠানামা, ফুটপাতে দোকান আর হকারদের কারণে মার্কেটগুলোর আশাপাশে জানজট লেগেই থাকে। যার কারণে শপিংয়ে এসে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এ ছাড়া নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেট এবং গাউছিয়া মার্কেট সংযোগকারী ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝে থাকা লোহার ব্যারিকেডের ভাঙা অংশ দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। এতে যেমন জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে তেমনি সড়কে চলাচলকারী গাড়ির গতি আরো কমে যাচ্ছে।

এ দিকে ঈদ কেন্দ্র করে ক্রেতাদের বাড়তি চাপ সামাল দেয়া ও মার্কেটের পরিবেশ ঠিক রাখতে তৎপর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। মার্কেটগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, নিজস্ব পাহারাদার দিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়া, সিসি ক্যামেরাসহ নানান উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনগুলো।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/826398