২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১২:২২

গড় আয়ু কমেছে বেড়েছে মৃত্যু

জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার (১ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত) * বেড়েছে শিশুমৃত্যুর হার * গড় আয়ু ৭২.৩ বছর * সিজার করে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে * বাল্য বিবাহ বেড়েছে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার

দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। এ কারণে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, দেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। যা আগের বছর ছিল ৭২ দশমিক ৪ বছর। যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটিকে কমে যাওয়া না বলে অপরিবর্তিত বলতে হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে।

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। কমেছে তালাক ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার। বেড়েছে বাল্যবিয়ে।

‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রোববার এটি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে এ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। বিবিএস’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসভিআরএস ইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন। বক্তৃতা করেন বিবিএস’র ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং-এর পরিচালক মাসুদ আলম। প্রশ্ন-উত্তর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপংকর রায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭১ জন। এছাড়া, প্রতি হাজার জনসংখ্যার স্থূল জন্মহার ১৯ দশমিক ৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৮। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৪১ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬ দশমিক এক, যা ২০২২ সালে ছিল ৫ দশমিক ৮। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৩৩ জন, যা ২০২২ সালের হিসাবে ছিল ৩১ জন। এক্ষেত্রে মৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। এছাড়া প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের প্রথম কারণ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুহার এক দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ও দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ বছর ও নারীদের ১৮ দশমিক ৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লিতে আগমনের হার ২০ দশমিক ৪ ও শহরে আগমনের হার ৪৩ দশমিক ৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬ দশমিক ৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ জন। আন্তুর্জাতিক আগমন বা বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৯৭ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ৩৭ জন।

২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালে (৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সিজার করে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে। ২০২৩ সালের হিসাবে এটি হয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ। বাল্যবিয়ে বেড়েছে। ২০২৩ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের বছর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে। জাতীয়ভাবে এ হার হয়েছে ৬২ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

খানার (পরিবার) আকার ২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে যা ৪ দশমিক ২ জন। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানা প্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

অপর দিকে পুরুষ খানা প্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে এ হার কমে হয়েছে ৮১ দশমিক এক শতাংশ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ ও ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এছাড়া শিক্ষা, কর্মে বা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণদের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) তুলনায় কমে ২০২৩ সালে ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে। ১৫ প্লাস বয়সি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৭৩ দশমিক ৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫ প্লাস বছর বয়সিদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৫০ দশমিক এক শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালাকের সংখ্যা কমেছে। ২০১৮ সালে তালাকের সংখ্যা ছিল প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক একজন, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৭ জন।

জনশুমারি ২০২২ এর ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪২ লাখ। নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার।

জনশুমারি অনুযায়ী মুসলমানের হার ২০২২ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা বর্তমানে হয়েছে ৮৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। হিন্দুর সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা বর্তমানে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বৌদ্ধর সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ১ দশমিক ১১ শতাংশ, যা বর্তমানে এক দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ, যা বর্তমানে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, এই তথ্য কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনা সম্ভব হবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সবাই মিলে সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারব।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/788584