২২ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ৪:১০

২১ দিনে রিজার্ভ কমেছে সাড়ে ৫৮ কোটি ডলার

চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধে

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি মার্কিন ডলার। গতকাল ২১ মার্চ তা কমে নেমেছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলারে। ২১ দিনের মাথায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৫৮ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার এ মজুদ যতই কমছে ততই আমদানি দায় পরিশোধে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে এলসির বকেয়া দায় দিন দিন বাড়ছে। সাথে বিদেশী এয়ার লাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রির বড় একটি অংশ তারা নিজ দেশে নিতে পারছে না। অপর দিকে বিদেশী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও বকেয়া দায় বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, তাদের পণ্য আমদানির বকেয়া দায় বেড়ে ৬০ কোটি ডলারের ওপরে উন্নীত হয়েছে। সরকারের বড় প্রকল্প, বিপিসির জ্বালানি তেল, ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল। কিন্তু তার একটি বড় অংশ এখন আর পরিশোধ করতে পারছে না। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতো। কিন্তু এখন যৎসামান্য সরবরাহ করা হচ্ছে। যেমন ২০ কোটি চাইলে দেয়া হয় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি ডলার। এভাবে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় দায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এখন অতি জরুরি পণ্য ছাড়া পণ্যের এলসি খোলা হচ্ছে না। এতে আমদানি কমে যাচ্ছে। আর আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকের এলসি থেকে কমিশন আয়ও কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের সরবরাহে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। এ কারণে তারা পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাই-জানুয়ারি ৭ মাসে আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮.৩০ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ঋণাত্মক ৫.৭১ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের মূলধন যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির। জুলাই- ফেব্রুয়ারি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটির প্রবিৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৫.৩৬ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৫ শতাংশ। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরী পোশাকের অর্ডার কমে যাচ্ছে। অনেক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়ে।

একদিকে বৈদেশিক দায় বাড়ছে, অপর দিকে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে সরবরাহ পরিস্থিতি না বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। কিন্তু এই দামে কোনো আমদানিকারক ডলার কিনতে পারছে না। ক্ষেত্রবিশেষ প্রতি ডলারের দাম ১১৮ টাকা থেকে ১২৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এ দিকে, আমদানি ব্যয় কমে গেলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়েনি, বরং তা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গতকাল ২১ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়েছে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ডলার, যেখানে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে ২১ দিনে নিট রিজার্ভ কমেছে ৫৮ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/823237