২০ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ১০:৪৯

লাইনচ্যুতির কারণে ৮৩% ট্রেন দুর্ঘটনা

রেলপথে দুর্ঘটনা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে চলন্ত ট্রেনের বগির লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা। এক বছরের ব্যবধানে রেলপথে এমন ঘটনা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। রেলওয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ট্রেন দুর্ঘটনার ৮৩ শতাংশই বগিগুলো লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত রেলপথের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

গত রবিবার চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর যাচ্ছিল বিজয় এক্সপ্রেস। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে কুমিল্লায় নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশনের কাছের একটি সেতু পার হওয়ার সময় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। সেতুর কাঠের স্লিপার ভেঙে যাওয়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনায় ট্রেনের ১৮টি বগির ৯টি রেললাইনের বাইরে চলে যায়। দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০০ মিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ মিটার রেল মূল লাইন থেকে দূরে সরে গেছে। তাপের কারণে রেললাইন বেঁকে গিয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, রেললাইন বেঁকে যাওয়ার কারণে বগি লাইনচ্যুত হওয়ার যে কারণ বলা হচ্ছে, সরেজমিনে তা পাওয়া যায়নি। তবে ঠিক কী কারণে ট্রেনটির ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে, এর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

গত সোমবার রাত ৯টা। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশন এলাকায় লাইনচ্যুত হয় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। ট্রেনটি পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে এসেছিল।
এই ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের চাকার ত্রুটির কারণে এই লাইনচ্যুত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু এই দুটি দুর্ঘটনাই নয়, সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২০-২১ অর্থবছরের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই বছর মোট ১১১টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৯২টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। ফলে ট্রেন দুর্ঘটনার ৮৩ শতাংশই লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে হচ্ছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৮০টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৭২টিই ঘটেছে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে। অঙ্কের হিসাবে এটা ৯০ শতাংশ।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১টি। একই সঙ্গে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ২০টি।
২০২০-২১ অর্থবছরের পর রেল থেকে আর কোনো চূড়ান্ত পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়নি। ওই সময়ের দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯২টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে পথে বাধার কারণে উপস্থিত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ৩৬ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হহয়। বিপত্সংকেতের মধ্যে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে চারবার। ভুল সংকেতের কারণে সাতবার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। অন্যান্য যান্ত্রিক কারণে দুইবার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ ছাড়া আরো ৪৩ বার নানা কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।

রেলওয়ের তথ্য বলছে, ট্রেন চলার সময় বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ২২ বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ৪.২৭ শতাংশ। সংকেতের কারণে দুর্ঘটনা ৭.৬৯ শতাংশ। অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ৪.২৭ শতাংশ।

রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই দিনে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটল। একটি ছোট, আরেকটি বড় দুর্ঘটনা। এর পেছনের কারণ তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

রেলে দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতি বাড়ছে
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত চার বছরের দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছর রেলপথে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই সময়ে মোট ৮৭২টি দুর্ঘটনায় এক হাজার ১৯ জন মারা গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৫০২ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ১০৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ২২৮ জন এবং আহত ৫৪ জন। ২০২১ সালে ১২৩টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছে। ২০২২ সালে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৩২৬ জন নিহত এবং ১১৩ জন আহত হয়েছে। ২০২৩ সালে ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরের তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, রেলপথে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এটি উদ্বেগজনক। কারণ সড়কের চেয়ে রেলপথ নিরাপদ হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। এখন রেলের নিরাপত্তার জায়গায়ও প্রশ্ন উঠছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ লেভেলক্রসিংয়ে অন্য যানের সঙ্গে সংঘর্ষ বা ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া। লাইনচ্যুতি কমাতে রেলের মান ঠিক রাখা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সাংকেতিক ব্যবস্থার ওপর আরো জোর দেওয়ার বিকল্প নেই।

৭০ শতাংশ রেলের আয়ুষ্কাল শেষ
রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ১২ বছরে রেললাইনে দুই হাজার ৬০১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের চলার পথে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার দুর্ঘটনা ২৫৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ট্রেনের যাত্রী ৩২ জন, রেলের লোক ৪৩ জন। অন্য ২৬৮ জন ট্রেনের আরোহী নয়। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অন্তত সাড়ে তিন গুণ মানুষ ট্রেনের আরোহী নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ রেললাইনের অবস্থা ভালো নয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। একটি রেললাইন গড়ে ৫০ বছরের মতো টেকে। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগ রেললাইন স্বাধীনতার আগে তৈরি। ফলে ৭০ শতাংশ রেলের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এতে বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে।’

ঝুঁকিতে ধুঁকছে দেশের রেলপথ
বর্তমানে দেশের ৪৩ জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত। রেলের কার্য ব্যবস্থাপনা পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে বিভক্ত। সারা দেশে এখন রেলপথ আছে তিন হাজার ৯৩ কিলোমিটার। আর রেললাইন আছে চার হাজার ৪৩৮ কিলোমিটার। ৪৩ জেলার ৩৯টিতেই রেললাইনে সমস্যা। রেলপথের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইন ঝুঁকিতে। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করা এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

রেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় সমস্যা বেশি। এই অংশে ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নতুন করে করতে হবে। ৪০০ কিলোমিটার পথে রেল পরিবর্তন করতে হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথে স্লিপারসহ অন্য সরঞ্জাম পরিবর্তন করতে হবে। পূর্বাঞ্চলের রেলপথে পাঁচ লাখ কিউবিক মিটার পাথরের ঘাটতি আছে।

রেলের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকায় রেলপথে এসব সমস্যা রয়েছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ছাগলনাইয়া, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, লাকসাম, চাঁদপুর সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কসবা, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব বাজার, নরসিংদী, টঙ্গী, ঢাকা সিটি করপোরেশন, কুলাউড়া, সিলেট সদর, ছাতক, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, জামালপুর সদর ও গৌরীপুর এলাকায় জটিলতা বেশি।

এদিকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২৩ জেলায় সমস্যা বেশি। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় কাজ করতে হবে। এই পুরো অংশে প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার রেললাইনের অবস্থা ভালো নয়।
পরের বেলা ভাত জুটবে কিনা জানে না ৩৪ লাখ মানুষ

খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য। একবেলা খাবারের শেষে পরের বেলার চালের জোগান নেই– দেশে এ রকম পরিবারের হার ২ শতাংশ। আটা মজুত থাকে না ৬০ শতাংশ পরিবারে। নিত্যপণ্যের মধ্যে ডালের সংস্থান নেই ১৯ শতাংশ পরিবারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পরিবারের সংখ্যা এখন ৪ কোটি ১০ লাখ। সংস্থার জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে দেশের ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ জন মানুষের একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলার চালের জোগান নেই।

খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ নামে এ প্রতিবেদন গত শুক্রবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, খাদ্য এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে বড় উদ্বেগের বিষয়। এতে আরও বলা হয়, ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে জর্জরিত জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে কোনো দেশ অর্থনীতির ভিত গড়তে পারে না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হতে চাইলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে ব্যাপক পরিমাণে কার্যকর বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানতে চাইলে বিবিএসের সংশ্লিষ্ট জরিপের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, মজুত বলতে পরিবারের কতটুকু খাদ্য আছে, তা দিয়ে কীভাবে চলতে পারে– তা বোঝানো হয়েছে। সরাসরি প্রশ্নের জবাব থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত নিয়ে একাধিক সংস্থার কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে পরিবার পর্যায়ে খাদ্য পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা দেশে এটিই প্রথম। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত এ ধরনের জরিপও এটিই প্রথম। এ কারণে খাদ্য গ্রহণের এ নাজুক পরিস্থিতির প্রবণতা আগের তুলনায় বাড়ল, না কমলো– তা তুলনা করা যাচ্ছে না।

জরিপে নিত্যপণ্য হিসেবে প্রধান খাদ্য চাল, আটা ও মসুর ডালের মজুত জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২ শতাংশ পরিবারে জীবিকা নির্বাহের জন্য চালের কোনো মজুত নেই। অর্থাৎ আগামী বেলার খাবার অনিশ্চিত এসব পরিবারের। সিটি করপোরেশনের বাইরের চিত্র আরও খারাপ। গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চল মিলে ২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে চালের কোনো মজুত নেই।

প্রায় ৬৯ শতাংশ খানাপ্রধান বলেছেন, কেনার মাধ্যমে তারা চালের মজুত করে থাকেন। বাকিরা নিজস্ব উৎপাদন এবং সরকারি সংস্থা থেকে চাল পেয়ে থাকেন।

আটার ক্ষেত্রে মজুত আরও কম। ৬০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে আটার মজুত নেই। মজুত থাকে না গ্রামের ৬৮ শতাংশ পরিবারের। যেসব পরিবারে পণ্যটির মজুত থাকে, তাদেরও চলে সাড়ে ৯ দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান খাদ্য হিসেবে চালের ওপর নির্ভরতার কারণে আটার মজুত এত কম হয়ে থাকতে পারে। একইভাবে মসুর ডালের মজুত নেই ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে।

জরিপ প্রতিবেদনে তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নমালা এবং উত্তর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারপ্রধানের কাছে জরিপকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কর্মীদের প্রশ্ন ছিল, গত ১২ মাসে এমন হয়েছিল কিনা, যখন আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য টাকা বা অন্য কোনো সম্পদের অভাবে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাবার থাকবে না– এমন দুশ্চিন্তা হয়েছিল। খাবার কেনার মতো টাকার অভাবে পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে কিনা, ক্ষুধা লাগার পরও খাবার কেনার টাকার অভাবে মাসে বা দুই মাসে অন্তত একবেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে কিনা? এসব প্রশ্নের জবাবের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত বছরের ১৫ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জাতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক নীতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যানভিত্তিক উপাত্ত প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। মাঠ পর্যায়ে মোট ২৯ হাজার ৭৬০ খানা বা পরিবার থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

https://samakal.com/bangladesh/article/228591