১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১২:৫৪

লন্ডন থেকে বিমানের খালি ফ্লাইট আসা নিয়ে প্রশ্ন

এই রুটের ৮০ শতাংশ যাত্রীই সিলেটের : লন্ডনে বিমান কান্ট্রি ম্যানেজার

ঢাকা-লন্ডন রুট লাভজনক হলেও এই মুহূর্তে লন্ডন থেকে ফ্লাইটগুলো খালি আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই ফ্লাইট খালি আসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে যাত্রীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। সর্বশেষ গত বুধবার লন্ডন থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইটের (ড্রিমলাইনার-৭৮৭-৮০০) বেশির ভাগই সিট খালি আসায় এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে সিট খালি থাকা সত্ত্বেও বুকড দেখানোর বিষয় নিয়ে।

তবে লন্ডনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার যাত্রীদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দাবি করেছেন, প্রতি বছর রমজানের এই সময়টাতে ঢাকা থেকে লন্ডনের হিথ্রোগামী ফ্লাইটে যাত্রীর চাপ থাকলেও লন্ডন থেকে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে। তবে মার্চ মাসের শেষের দিকে আবার ঢাকাগামী প্রতিটি ফ্লাইটের সিট ফুল হয়ে আসে।

গোলাম রাব্বানী নামে এক ব্যক্তি গত ১৩ মার্চ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন টু বাংলাদেশ ফ্লাইটের (বিজি-২০২) গতকালের চিত্র! মাত্র ৬০ জন যাত্রী, ১৭০ সিট খালি। সব সিট ফাঁকা কিন্তু টিকিট করতে গেলে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে এবং ফুল বুকড দেখায়! ‘দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট তথা চোর বাটপারদের কারণে অন্য এয়ারলাইন্সের তুলনায় বিমানের টিকিট মূল্য সবসময় বেশি থাকে, প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, তথা বাংলাদেশ সরকারকে। বিমানের দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানার, দেশের স্বার্থ দেখার কি কেউ নাই?’ তার এমন ক্ষোভের পোস্টের নিচে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের ভেতরের দু’টি ছবি পোস্টও করা হয়েছে। ওই ছবি দু’টিতে উড়োজাহাজের অধিকাংশ সিটই খালি দেখাচ্ছিল।

গোলাম রাব্বানীর পোস্টের সূত্র ধরে এর সত্যতা জানতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডনে থাকা স্টেশন ম্যানেজার আহমদ রহমত খোদার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডনের কান্ট্রি ম্যানেজার ইরতেজা কামাল চৌধুরীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন। পরে ইরতেজা কামাল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বিমানের সিট ফাঁকা যাওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে দিনের ফ্লাইটের ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে, সেটি মূলত গত বুধবারের লন্ডন-সিলেট-ঢাকা রুটের ফ্লাইটের দু’টি ছবি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮০০) হিথ্রো থেকে ঢাকাগামী ওই দিনের ফ্লাইটের ২৭১ সিটের মধ্যে মোট যাত্রী ছিলেন ৬৬ জন। এর মধ্যে ইকোনমি ক্লাসের ৬১ জন এবং বিজনেস ক্লাসের পাঁচজন। সিট ফাঁকা থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু কিছু সিজন আছে সেই সময়টাতে যাত্রী কম থাকে। তেমনি রমজানের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে যাত্রী কম ট্র্যাভেল করে থাকেন। তবে আগামী ২২/২৩/২৪ মার্চ প্রতিটি ফ্লাইটের সিট ফুল বুকড আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই পোস্টটা যিনি করেছেন তার পরিচয় আমরা জানতে পেরেছি। তিনি এটি জেনে অথবা না জেনে করেছেন কি না জানি না, তবে সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না। তার মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার জন্য ওপেন। ওখানে সবাই কথা বলতে পারেন। বিমানের টিকিট বিক্রির সিস্টেম ও যাত্রীদের অনলাইনেও সিট (আসন) না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকজন কেন যে আমাদের ব্লেম দেন তা বুঝি না। আমরা যথাসময়ে টিকিট বিক্রির জন্য অনলাইনে ছেড়ে দেই। এখানে আমাদের কি করার আছে? সিট খালি যাওয়া প্রসঙ্গে আরো বলেন, এই সময়ে ইউকে থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার ট্রেনড খুবই কম থাকে। এই মাসের পর আবার এপ্রিল মাসে স্টার হলিডেতেও স্কুল কলেজ বন্ধ থাকে। তাই ট্র্যাভেল কম করে মানুষ। তবে রিটার্ন (ঢাকা-লন্ডন) বেশি থাকে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার ইরতেজা কামাল চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা-লন্ডন সরাসরি রুট কিন্তু প্রফিটেবল রুট। খরচের তুলনায় প্রফিট বেশি। কোভিডের পর আমাদের এই রুটে বিজনেসও বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা-সিলেট-হিথ্রো রুটে সপ্তাহের শুক্র, শনি, রবি ও বুধবার চলাচল করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই রুটে যত যাত্রী যাতায়াত করেন তার মধ্যে সিলেটের যাত্রীই থাকেন ৮০ শতাংশ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/821728