১৬ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ১২:৫১

পণ্যের বাজার দ্রব্যমূল্যের আতংক পিছু ছাড়ছে না

একের পর এক বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা মানুষ। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এই রমযানে নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। সেই সাথে নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে লেবু, শশা, ধনিয়া পাতা, টমেটোর দাম। বাজার ভেদে প্রতি ডজন লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায়। মানভেদে শশার কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা। দাম বাড়ার দৌড়ে আরও এগিয়েছে খেজুর। সব থেকে কম দামি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকায়। ভালো মানের খেজুর ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, রমযানে চাহিদার শীর্ষে থাকা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে। সেই হিসেবে ছোট সাইজের একটি তরমুজ কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। ইফতারী সামগ্রী প্রস্তুতে ব্যবহৃত বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আমন ধানের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, তারপরও বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও মিনিকেট চালের দাম গত তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এর আগে ভোটের পরপর চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিল। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কেনা দাম বেশি। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে।

চাল ব্যবসায়ী জসিম জানান, গুটি স্বর্ণা ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা হয়েছে প্রতি বস্তা। এ চাল আগে খুচরা ৫০ টাকায় বিক্রি করা যেত, এখন ৫১-৫২ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। বস্তা নিলে ৫১ টাকায় দেওয়া যায়, খুচরায় ৫২ টাকার নিচে হয় না।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা। মিনিকেট ২৫ কেজির বস্তা আগে ১৬০০ টাকা ছিল, এখন ১৭০০ টাকা হয়েছে। সে কারণে খুচরা ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা ৬৮ টাকা ছিল। আর ভালো মানের মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি আরও দুই টাকা বেশি। একইভাবে পাইজাম চালের দাম ৫১-৫২ থেকে বেড়ে প্রতিকেজি ৫৩-৫৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সবজি বাজারে দেখা গেছে, শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৮০ টাকা, সাদা মুলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, খিরাই ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০-৯০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০-১২০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় করলা, পটল, ঢেঁড়স, কাঁচামরিচের দাম কমেছে। আর গাজর, টমেটো, খিরাই, ফুলকপির দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

এছাড়া মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৩৫-৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা এবং আলুর দাম বেড়েছে আরও ৫ টাকা।

মুদি দোকানের পণ্যের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে এক লাফে ৪৫ টাকা বেড়ে গেছে খেসারির ডালের দাম। ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১৬০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে খেসারির ডাল ছিল ১১৫ টাকা কেজি, তা হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৮০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১৩০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর গোশত ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভরা মৌসুমে আলু জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকায়। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। বেড়েছে কাচা মরিচের দাম। প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আবহাওয়া খারাপ থাকায় গত সপ্তাহ থেকে সব ধরনের সবজির আমদানি কম। তাই সবজির বাজার চড়া।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে চাপে থাকার কথা জানিয়ে কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা ইউসুফ বলেন, বাইরের দেশ গুলোতে রমযান মাস আসলে সব ধরণের জিনিস পত্রের দাম কমে। আর আমাদের দেশেই মনে হয় রমযান মাস আসলে সব থেকে বেশি দাম বাড়ে। বাজারে সকল জিনিসের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সবকিছুর দামই প্রায় বেড়েছে। আমাদের উপর চাপ অনেক বাড়ছে।

এদিকে বাজারে আমন ধানের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও মিনিকেট চালের দাম গত তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এর আগে ভোটের পরপর চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিলো। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কেনা দাম বেশি। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে।

ওদিকে গত সোমবার সরকার অতি সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং দেশে বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তার প্রভাব দেখা যায়নি। বেঁধে দেয়া দামে কেউ বিক্রি করছেন না এসব খেজুর। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জাইদি খেজুর ২৮০ থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের খেজুর এক হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।

https://www.dailysangram.info/post/551438