১৪ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৩২

শুল্ক কমানোর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা

সরকার রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তার নাগালে রাখতে শুল্ক কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। অতিমুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৌশলে এবারও অন্যান্যবারের মতো ফায়দা লুটছেন। অনেক ক্ষেত্রে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রি করে তাঁরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের মুনাফা।

পবিত্র রমজানের সময় বিশ্বের অনেক দেশে পণ্যের দাম কমানো হয়।
আমাদের বাজারে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। এ সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
নতুন করে সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ উদ্যোগ নেয়। এসবের মধ্যে শুল্ক কমানো, খাদ্যপণ্য আমদানিতে যেন বিঘ্ন না ঘটে এ জন্য ব্যবসায়ীদের ঋণপত্র খোলা সহজ করে দেয়।
ব্যবসায়ীরা এসব সুবিধা নিলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি ও বাজার সূত্রে জানা যায়, গত রমজানে সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। বর্তমানে সেই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ভালো মানের প্রতি কেজি খেজুর ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, এবার একই খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়।

গত রমজানে চিনি প্রতি কেজি ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, সেই চিনি এবার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। ছোলার দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। পেঁয়াজ ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, এবার বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আলু ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

এ প্রসঙ্গে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার যত উদ্যোগই নেয়, এতে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সাড়া নেই।

কেননা দেশে কোনো কোনো উৎসব-পার্বণকে তাঁরা মুনাফা লুটে নেওয়ার সুবর্ণ সময় মনে করেন। তাই রোজার সময় ধর্মীয় আবেগ তাঁদের স্পর্শ করে না। অথচ প্রায় সব দেশেই এ সময় পণ্যমূল্যের দাম কমানো হয়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুসারে, বছরে চিনির চাহিদা ২২ লাখ টন। শুধু রোজায় দরকার হয় তিন লাখ টন। দেশে চিনি উৎপাদন হয় ৩০ হাজার টনের মতো। বাকি চাহিদা আমদানি করে মেটাতে হয়। গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকায়। অর্থাৎ চিনির কেজিতে অতিরিক্ত খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

বছরে প্রায় দুই লাখ টন ছোলা আমদানি হয়। রোজায় দরকার হয় এক লাখ টন। গত বছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কেজিতে বেশি খরচ করতে হবে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। গত বছর রোজার আগে অ্যাংকর ডালের কেজি ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়।

পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টনের। উৎপাদনের পাশাপাশি আট থেকে ৯ লাখ টন আমদানি করতে হয়; যার বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় দেশে এখন আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে এখন দেশি পেঁয়াজের ওপর পুরোপুরি নির্ভর বাজার। তাতে দামও বেশ চড়া। গত বছর রোজার আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা দরে। সে হিসাবে কেজিতে বেশি খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

ডালের মধ্যে এখন প্রতি কেজি মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। মুগ ডালের কেজি পড়ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা। বেসনের দামও বেড়েছে অত্যধিক। ছোলার বেসনের কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। খেসারির বেসনের কেজি এবার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, গত বছর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।

শুল্ক কমানোর সুফল পায় না ভোক্তারা
রজমান সামনে রেখে সরকার চাল, খেজুর, ভোজ্য তেল এবং চিনির শুল্ক কমিয়ে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন। রমজান মাস থাকায় মানুষ যাতে কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারে, তাই পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশের ১০ দিনের মাথায় এনবিআর চারটি পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ। রমজান সামনে রেখে সেটি কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুর আমদানিকারকরা ১০ শতাংশ কম শুল্কে আমদানির এ সুবিধা পাবেন আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত।

এ ছাড়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/03/14/1371378