১২ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:১৪

এবারও রমজানে ভোগাতে পারে গ্যাস-বিদ্যুৎ

একদিকে বাড়তে শুরু করেছে গরম, অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। এর মধ্যেই সেচ মৌসুম হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই ঘাটতির মধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পারছে না পেট্রোবাংলা। সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন এই টার্মিনাল চালু হওয়ার কথা মার্চের শেষ দিকে। ফলে রোজা ও গরমের মধ্যে পণ্যমূল্যের মতো ভোগান্তির খাতায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট যুক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা খাত-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানা ও পরিবহনে গ্যাসের সংকট আসন্ন দিনগুলোতে আরও প্রকট হবে। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে অনেক অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের খবর মিলেছে। খোদ রাজধানীর অনেক এলাকায় সকালে ও সন্ধ্যায় চুলা জ্বলছে না। চাপ কম থাকায় সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে।

এমনিতে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে চাপে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ। গ্যাস সংকটের কারণে এবার এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি মনে করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। পাশাপাশি পরিস্থিতি সামলাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি হারে চালানোর পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বলেছেন, রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ রাত থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। মাসের শেষ দিকে দু-একটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহেরও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তাপমাত্রা বাড়লে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তিত বিদ্যুৎ বিভাগ।
পিডিবি সূত্র জানায়, এবার রমজানে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের এ চাহিদা থাকবে। এ সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ধরা হয়েছে ন্যূনতম ১৫৪ কোটি ঘনফুট। অথচ গত রোববার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৮৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এদিন মোট গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৬৬ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৬১ কোটি ঘনফুট পাওয়া গেছে এলএনজি থেকে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৪২০ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘একটি এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বন্ধ রয়েছে। এটি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে চালু হতে পারে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সে সময় বিদ্যুৎ খাতে ১১০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়। বলা হচ্ছে, ২৫ মার্চ এটি চালু হবে। টার্মিনালটি চালু হলে গ্যাস সরবরাহ ৪০-৫০ কোটি ঘনফুট বাড়বে।

জানা গেছে, রমজানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন এবং ডিজেলের চাহিদা ১৫ হাজার ৬০০ টন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও ময়মনসিংহে লোডশেডিং হচ্ছে। গত রোববার দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৪৫ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয় ১১ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। এদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ১৪২ মেগাওয়াট।

বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। তবে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে গ্যাসের উৎপাদনও কমছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ব্যবস্থাপনা এখনও দুর্বল। ফলে সক্ষমতার পরও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে এ বছরও লোডশেডিং করেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এদিকে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে ৫ মার্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ জন্য ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ব্যবহৃত ফোন ও মোবাইল নম্বর এবং হটলাইন নম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।

https://samakal.com/bangladesh/article/227253