১১ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১:০০

এবারের রমজানেও কী ভোগাবে যানজট

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে তীব্র যানজটে ভুগতে পারেন রাজধানীবাসী। একমাত্র ভরসা মেট্রোরেল। এর সুবাদে উত্তরা-মতিঝিল রুটের যাত্রীরা যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল মহাসড়ক) গাড়ির গতি বাড়ালেও র‌্যাম্প থেকে নামার পথে যানজট হতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে কিনা, এর ওপর নির্ভর করবে যানজট পরিস্থিতি। রমজানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার প্রজ্ঞাপন রোববার বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আভাস দিয়েছে, এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হতে পারে।
যানজট এড়াতে বছরের অন্যান্য সময় রাজধানীতে অফিস-আদালত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে শুরু হয়। কিন্তু রমজানে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। আবার ছুটিও হয় কাছাকাছি সময়ে। ইফতারের আগে ঘরে ফেরার তাড়া থাকে। এতে প্রতি রমজানে সকালে এবং দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত তীব্র যানজট থাকে।

যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০১০ সাল থেকে রোজায় বন্ধ রাখা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বছরের শুরুতে প্রকাশিত বার্ষিক ছুটির তালিকা অনুযায়ী পুরো রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি রাখা হয়েছিল। করোনা মহামারিকালীন শিখন ঘাটতি পোষাতে গত দুই বছর রমজানের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এতে কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা একই সময়ে পথে নামায় ব্যাপক যানজট হয়েছিল।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেছেন, ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা কতটা দুর্বল তা রোজায় বোঝা যায়। সড়ক বাড়তি গাড়ির চাপ নিতে না পারায় যানজট বাড়ে। পৃথিবীর কোথাও এমন অপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই যানজট ঠেকাতে রোজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ স্কুলে আসা প্রাইভেটকার। তবে সেই প্রতিবেদন দেওয়ার আট বছর পরও সমাধান হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত অক্টোবরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর ফার্মগেট ও বনানীতে গাড়ির চাপ বেড়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে ৩ লাখ ৯১ হাজার যানবাহন চলেছে উড়াল মহাসড়কে। দিনে সড়কে সাড়ে ৪৩ হাজার যানবাহন চলছে এতে। ফার্মগেট এলাকা দিয়ে নামছে ১৫ হাজারের বেশি যানবাহন। সন্ধ্যার পর গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে ফার্মগেটে নামার এবং বিজয়সরণি থেকে ওঠার র‌্যাম্পে। রমজানের বিকেলে তা আরও তীব্র হতে পারে।

ভোগাবে উন্নয়নকাজ
মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় এবারের রোজায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে বড় ধরনের খোঁড়াখুঁড়ি নেই। তবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজের কারণে বিমানবন্দর থেকে উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত পুরো সড়কেই উন্নয়নকাজ চলছে। গত ৫ মার্চ কাজ শুরুর পর থেকেই রাজধানীর এই প্রবেশ পথে যানজট হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ জানান, ১৮ মার্চ পর্যন্ত কাজ চলবে। ততদিন যানজট থাকতে পারে।

এদিকে সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ কোম্পানি বিভিন্ন অলিগলিতে খনন চালাচ্ছে। এর প্রভাবেও মূল সড়কে যানজট হচ্ছে।

ঈদ বাজারে ভোগান্তি
অন্যান্য বছর রমজানে বিপণিবিতানের আশপাশের সড়কের ফুটপাত দখলমুক্ত করে পুলিশ। তবে এবার তেমন তৎপরতা নেই। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, রোজায় মার্কেট এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশ বৈঠক ডেকেছে। প্রতিবছর এমন বৈঠক হলেও লাভ কিছুই হয় না।
কেন ফল হয় না– জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মার্কেটগুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। রোজায় সবচেয়ে বেশি ক্রেতার সমাগম হয় নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা, গাউছিয়া এবং গুলিস্তান এলাকায়। কিন্তু গাড়ি দূরে থাক, ক্রেতার ভিড় সামাল দেওয়ার জায়গা নেই সড়কে।

ট্রাফিক পুলিশের ভাষ্য
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী, আবাসন সোসাইটি ও নানা পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় চলছে। গত শনিবার ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগ শ্যামলীর রিং রোডে মতবিনিময় সভা করে। এতে কাউন্সিলর এবং ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা ছিলেন। ফুটপাত ও রাস্তা হকারমুক্ত রেখে যানজট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, রোজায় সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সবার সহায়তা প্রয়োজন।
ইফতার বাজারের কারণে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতেও রোজায় যানজট হয়। ট্রাফিক পুলিশের স্থানীয় থানা তা নিরসনে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, রোজায় যানজট নিরসনের জন্য কাজ চলছে। সব কিছু পর্যালোচনা করে এবার নতুন কৌশল নেওয়া হবে। পরিকল্পনায় কী কী থাকছে, তা ঢাকাবাসীকে জানানো হবে।

https://samakal.com/capital/article/227082