৬ মার্চ ২০২৪, বুধবার, ৭:৪৬

প্রতি মাসেই বাড়ছে ঋণের সুদ

বিপাকে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা

প্রতি মাসেই বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। সর্বশেষ গত মাসের শেষ দিকে এসে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ পার হয়েছে। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ ছেড়ে গেছে। এ সুদহার চলতি মাস থেকেই কার্যকর হয়েছে। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যাচ্ছেন বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা। বিনিয়োগাকারীরা তাদের ব্যবসার ব্যয় ঠিক রাখতে পারছেন না। এতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। আর পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন ভোক্তারা।


জানা গেছে, সরকার ব্যাংক থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে। আর এ বাড়তি সুদের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহারের ওপর। কারণ, নতুন পদ্ধতিতে সুদ হার নির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হারের ভিত্তিতে। আর এ পদ্ধতি চালু হয়েছে গত জুলাই থেকে। সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে এর সুদহার ক্রমেই বেড়ে চলছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই সুদ হার বাড়ছে।

যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটি পরিচিত স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে যা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এভাবে প্রতি মাসেই এ স্মার্ট রেট বেড়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরে স্মার্ট রেট বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে আরো বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ স্মার্ট রেট ৮ শতাংশের ঘরে চলে যায়, যা থাকে পর পর দুই মাস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে হয় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত মাসে এক লাফে প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।

জানা গেছে, এ স্মার্ট রেটের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয়া আরো একটি অংশ যুক্ত করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ফেব্রুয়ারিতে এ স্মার্ট রেটের সাথে সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্ত করে ব্যাংক ঋণের নতুন হার নির্ধারণ করা হয়। এতে দেখা যায় ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ ছেড়ে হয় ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। এ হার চলতি মার্চ থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

অপর দিকে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও ঋণের সুদ যুক্ত করতে বলা হয়েছে স্মার্টের সাথে সাড়ে ৫ শতাংশ। স্মার্ট ৯ দশমিক ৬১ শতাংশের সাথে সাড়ে ৫ শতাংশ যুক্ত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের নতুন সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এক দিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। অপর দিকে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। এক বছর আগেও প্রতি ডলার পেতে ব্যয় হতো ১০৬ টাকা। এখন ১২৪ টাকা থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে সবদিক থেকেই বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী ব্যয়। কিন্তু একই সাথে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ব্যয় তাদেরকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে হারে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই হারে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এতে তাদের মুনাফার অংশ কমে যাচ্ছে। অনেকেই লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্যাংকের ঋণ ঠিক মতো পরিশোধ করতে না পেরে ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন। আর একবার ঋণ খেলাপি হলে নতুন করে পণ্যের এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। সবমিলেই শিল্পোদ্যোক্তারা একপ্রকার কঠিন সময় পার করছেন। অনেকেই লোকসানের ধকল কাটাতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

এদিকে ভোক্তারাও বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছেন। যে হারে ব্যয় বাড়ছে, বিপরীতে তাদের আয় বাড়ছে না। ফলে বিদ্যমান আয় দিয়ে ভোগ ব্যয় কমিয়ে দিয়ে দিন পার করছেন। কিন্তু এটা কত দিন চালাতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/819190