১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৪:২০

আস্থার সঙ্কটে মেট্রোরেল

মেট্রোরেল নগরবাসীর কাছে ভরসা স্থল হয়ে উঠেছে। তবে হুটহাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চলাচলের দ্রুততম এই বাহনটি। কখনো যান্ত্রিক জটিলতা, কখনো ঘুড়ি, কখনও ফানুস, কখনও বা বিদ্যুৎ- নানা কারণে থেমে যাচ্ছে মেট্রোরেলের চাকা। আবার যাত্রীদের এমআরটি পাসও নষ্ট হচ্ছে হুটহাট। আর তাতেই ভরসার মেট্রোরেল মাঝে মাঝেই হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তার কারণ। এতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও রয়েছে লোকবলের স্বল্পতা। পর্যাপ্ত লোকবলের স্বল্পতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

গতকাল বিজয় স্মরণী স্টেশনে এক যাত্রী বলেন, মেট্রোরেলের বিজয় স্মরণী স্টেশনে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় দুটি কাউন্টারে কোনো লোক নেই। যেখানে মেশিনে টিকিট কাটতে হয় সেখানেও মানুষ টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নয়। অভ্যস্ত না থাকার কারণে অনেকে মেশিনে টিকিট কাটতে যাচ্ছে না। আর দুই কাউন্টার বন্ধ থাকার কারণ সম্পর্কে একজন আনসার সদস্য জানিয়েছেন, জনবলের অভাব থাকার কারণে কাউন্টারগুলো বন্ধ। জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। তবে সাধারণ যাত্রীরা বলছেন আসলে কি জনবলের স্বল্পতায় কাউন্টার বন্ধ রয়েছে নাকি অন্যকোনো বিষয় রয়েছে যার কারণে কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু মেট্রোরেলে। প্রথম দিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে চললেও গত বছরের নভেম্বর থেকে পুরো দমে শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের কার্যক্রম। দৈনিক ১৩ ঘণ্টার বেশি সময় চলাচল করছে আধুনিক এই বাহনটি। কম সময়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার কারণে মেট্রোরেল জয় করেছে নগরবাসীর আস্থা। তবে সাম্প্রতিক জটিলতাগুলো ভাবাচ্ছে জরুরি সময়ে হঠাৎ আটকে পড়া নিয়ে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই চলতে চলতে হঠাৎ বন্ধ হচ্ছে মেট্রোরেল। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে নানা কারণ দেখাচ্ছে। কখনও অল্প সময়ে ঠিক হয়ে যাবার কথা বললেও ঘণ্টাখানেকও বিলম্ব হচ্ছে। ফলে যাত্রীরা যে সময়ের পরিকল্পনা নিয়ে মেট্রোরেল এসেছিলেন বা কাজের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা অনিশ্চয়তার কবলে পড়ছে।

মেট্রোরেলের সময়সূচির জটিলতার পাশাপাশি এমআরটি পাসের জটিলতাও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ বলছেন, তিন দিন ধরে ঘুরছি, সার্ভার বন্ধ থাকায় কোনো সমাধান পাচ্ছি না। কেউ বলছেন, এমআরটি পাসে তো হয়রানি আরও বেড়ে গেছে। আবার কেউ কেউ পুরো সিস্টেমকেউ দোষ দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির অধীনে আনতে বলছেন। আবার কেউ বলছেন, এমআরটি পাসে ম্যাগনেটিক রিবন আছে। কার্ডটি যতœ করে রাখতে হবে। সম্প্রতি ফেসবুকে মেট্রোরেলের একটি গ্রুপে এক যাত্রী দ্রুত এমআরটি পাস ড্যামেজ হওয়া নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তারা সার্ভার সমস্যার কারণে হয়রানির ভোগান্তিতে পড়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সুস্থ কার্ড হুটহাট ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে। কার্ড নিয়ে গেলেই বলে এর কাছে যান, ওর কাছে যান! এমআরটি পাসে হয়রানি তো আরও বেড়ে গেল। তার ওপর কার্ডে বেশি রিচার্জ করে নিলাম তখন বলে ড্যামেজ।

মিরপুরের এক যাত্রী বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মতিঝিলের একটি বেসরকার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর অনেকের মতোই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি। তবে ৬ মাসে অন্তত ৭ দিন তিনি যান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছেন। কখনো অপেক্ষার পর মেট্রোরেলে চড়েই বিলম্বে অফিসে পৌঁছেছেন। আবার কখনো বা অন্য বাহনে গিয়েছেন।

গত দুই মাস ধরে তিনি নিয়মিত মেট্রোরেলেই যাতায়াত করেন আসিফ। তিনি বলেন, গত দুই মাসে তিন দিন অফিসের উদ্দেশে বের হয়ে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। সঠিক সময়ে নিরাপদে পৌঁছাতে পারব বলেই মেট্রোতে যাতায়াত করি। এখন সেটিও সময়সূচি মেনে চলে না। হঠাৎ করেই যান্ত্রিক জটিলতায় বিলম্ব হচ্ছে। আবার ঘুড়ি বা ফানুসের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মেট্রোরেলের আরেক নিয়মিত যাত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার আমি সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে মতিঝিলের দিকে যাওয়ার জন্য মিরপুর-১০ স্টেশনে ছিলাম। ট্রেন এসেছিল ৮টা ১৩ মিনিটে। ততক্ষণে প্ল্যাটফর্মে অনেক যাত্রী জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। আমি গত এক মাসে এরকম তিন বার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। হয় সময়সূচিতে জটিলতা হচ্ছে, অথবা বাহনই আটকে যাচ্ছে। ট্রেন বিলম্বে আসার কারণে অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থীকেও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সবশেষ ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালেও জটিলতায় পড়ে মেট্রোরেল। দরজা বন্ধ না হওয়ার জটিলতায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে চলাচল।

মেট্রোরেলের এসব জটিলতা নিয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের কথা বলার পরামর্শ দেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/639759