১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার, ৪:১৫

আমদানি কমেছে টেকনাফ স্থলবন্দরে

শনিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রমে। মিয়ানমার থেকে আমদানি কমেছে, আর ডিসেম্বর থেকে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। এতে রাজস্ব আয়ও কমেছে। এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনের সীমান্তের ওপার থেকে গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন বন্দর থেকে প্রতি মাসে টেকনাফ স্থলবন্দরে তিন শতাধিক কার্গো ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসত। তবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭ দিনে এসেছে মাত্র ৫০টি কার্গো ট্রলার।

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তে চোরাচালান নিরুৎসাহিত করতে ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দর চালু হয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু, আকিয়াব বন্দরসহ বিভিন্ন নদীবন্দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত টেকনাফ স্থলবন্দরের।

টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন বন্দর থেকে প্রতি মাসে টেকনাফ স্থলবন্দরে তিন শতাধিক কার্গো ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসত। তবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭ দিনে এসেছে মাত্র ৫০টি কার্গো ট্রলার।

বন্দর সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে কাঠ, সুপারি, হিমায়িত মাছ, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, শুঁটকি, ছোলা, ডাল, চাল, আচার, নারকেল আমদানি করা হয়। আর টেকনাফ থেকে প্লাস্টিক সামগ্রী, তৈরি পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, আলু, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) সৈয়দ আনসার মোহাম্মদ কাউসার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিককালের পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে। ডিসেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত এই স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে কিছুই রপ্তানি হয়নি।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, স্থলবন্দরের জেটিতে দুটি কার্গো ট্রলার ও দুটি জাহাজ রয়েছে। নাফ নদীতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ। তবে বন্দরের খোলা জায়গা ও গুদামে মিয়ানমার থেকে আগে আসা কাঠ, আদা, সুপারি, শুঁটকি, নারিকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরনের কিছু পণ্য মজুত রয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে কাঠ, সুপারি, হিমায়িত মাছ, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, শুঁটকি, ছোলা, ডাল, চাল, আচার, নারকেল আমদানি করা হয়। আর টেকনাফ থেকে প্লাস্টিক সামগ্রী, তৈরি পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, আলু, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়।

স্থলবন্দরের শ্রমিকদের মাঝি (দলনেতা) আলী আজগর বলেন, এ স্থলবন্দরে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে স্থলবন্দরে দৈনিক ৬০ থেকে ৯০টির মতো ট্রাক লোড-আনলোড হয়। কিন্তু ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখন কাজ কমে গেছে।

ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, আগে মাসে তিন থেকে পাঁচটি ভাড়া নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যেতেন। গত ১৭ দিনে একটিও ভাড়া পাননি। শুধু তিনি নন, একই অবস্থা অন্য চালকদেরও।

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দরের আদা, শুঁটকি, সুপারি ও আচার আমদানিকারক মোহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, আকিয়াব বন্দরে কিনে রাখা শত শত মণ আদা, নারকেল, শুঁটকি, সুপারি ও ছোলা মজুত রয়েছে। এগুলো না আনতে পারলে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হবে।

এ স্থলবন্দরে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে স্থলবন্দরে দৈনিক ৬০ থেকে ৯০টির মতো ট্রাক লোড-আনলোড হয়। কিন্তু ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখন কাজ কমে গেছে।
স্থলবন্দরের শ্রমিকদের মাঝি (দলনেতা) আলী আজগর

টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
কাস্টমস শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে ৬৬ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৪৮ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ৬ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ২৬ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সীমান্তের ওপার থেকে শনিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপে অবস্থান করে মিনিট পাঁচেক পরপর গুলির শব্দ শোনা গেছে।

থেমে থেমে আসছে গুলির শব্দ
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সীমান্তের ওপার থেকে শনিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপে অবস্থান করে মিনিট পাঁচেক পরপর গুলির শব্দ শোনা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে শনিবারের তুলনায় কম।

এদিকে গতকাল শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে সব ধরনের নৌচলাচল বন্ধ ছিল।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/n963pf2adu