২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত (১৩ মাস) দেশে এক হাজারের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে ৫২৯টি শিশু রয়েছে। এসব হত্যার কারণ হিসেবে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিক বিরোধ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ হত্যাকা- ঘটেছে পারিবারিক কলহের কারণে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। তবে এসব ঘটনার জন্য মনোরোগবিদ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে দায়ী করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে সারা দেশে এক হাজারের বেশি হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ হত্যাকা- ঘটেছে পারিবারিক কলহের কারণে। তার মধ্যে রাজধানীর আটটি ক্রাইম বিভাগের ৫০ থানা এলাকায় গত এক বছরে হত্যার ঘটনায় ১৬৫টি মামলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সামাজিক বিরোধ থেকে সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনি সহিংসতার অন্তত ৭৪৯টি ঘটনায় নিহত ১৫ জন। আহত ২ হাজার ৫১৬ জন। ১০০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ৪৫০টির বেশি গৃহ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওই সময়ে গণপিটুনিতে ৫১ জন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে ২০ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে সারা দেশে ৫৭৩ জন নারী ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তিন নারীকে। ধর্ষণের শিকার আরও তিন নারী আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২২ জন পুরুষ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটজন নারী-পুরুষ খুন হন।
সমাজ বিশ্লেষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সম্প্রতি সারা দেশে খুনখারাবির মতো অপরাধ বেড়েছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ করেও আইনের ফাঁকফোকর গলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পার পাওয়াও এতে ইন্ধন জোগাচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক পরিবর্তন, পারিবারিক মূল্যবোধ ও বন্ধন অনেকটা ভেঙে গেছে। বিশ্বায়নের যুগে মানুষের মধ্যে লোভ ও উচ্চাভিলাষ বাড়ছে। এতে অবক্ষয় ঘটছে নৈতিকতার। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন বিশৃঙ্খল পরিবেশ মানুষকে মানসিকভাবে অপরাধপ্রবণ করে তুলছে।
