১৫ মে ২০১৭, সোমবার, ৩:৩৩

আলোচনায় ট্রাম্পের অভিশংসন

ট্রাম্পকে অবশ্যই অভিশংসন করা উচিত। ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় সৃষ্টির কারণে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের তদন্ত করার সময় হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর কয়েক মাস না যেতেই প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের ব্যাপারে জোর আলোচনা চলছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্প কি অভিশংসিত হওয়ার মতো অপরাধ করেছেন? অনেকের মতে, মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঝুঁকি তৈরি করে ট্রাম্প সংবিধান লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ব্যবস্থা সুরক্ষার শেষ কৌশল হিসেবে অভিশংসনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় নির্বাহী বিভাগের কোনো কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ক্ষমতার অপব্যবহারকে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা ‘বড় অপরাধ ও সংবিধান অবমাননাকারী’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের আর বিশ্বাস করা যায় না।

ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক লরেন্স এইচ ট্রাইব লিখেছেন, ট্রাম্পকে অবশ্যই অভিশংসন করা উচিত। ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় সৃষ্টির কারণে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের তদন্ত করার সময় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এখন এমন একজন প্রেসিডেন্ট শাসন করছেন, যার আচরণই বলে দিচ্ছে যে, তিনি দেশটির সরকার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার এবং তাকে অভিশংসন করার মতো অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের অবৈধ যোগসাজশের ব্যাপারে তদন্ত জোরদার করার কারণে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে চাকরিচ্যুত করার আগেই এটা করা যেত। এরপর জাতীয় টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি সেটা স্বীকারও করেছেন। এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া ইস্যুতে তদন্তের ব্যাপারে তিনি কোমির কাছ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন যে, এ ব্যাপারে তার তদন্ত করা হচ্ছে কিনা। এরপর তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে না এফবিআই।

এফবিআই প্রধান থাকার বিনিময়ে কোমির কাছ থেকে আনুগত্যও দাবি করেন ট্রাম্প। কিন্তু কোমি বলেন, আমার কাছ থেকে ‘সততা’ পাবেন। আর এ কারণেই কোমিকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এসব বিষয়ে এখনই তদন্ত শুরু হওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, এসব বিষয়ে চলমান বহু তদন্তের ফলের জন্য আরও অপেক্ষা করার অর্থ হচ্ছে একজন একনায়ক নেতার কাছে জাতির ভাগ্য সপে দেয়া। জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়ে চলমান তদন্তের ওপর হস্তক্ষেপ স্পষ্টত বড় ধরনের অপরাধ। একইভাবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চেষ্টা করেছিলেন যা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত। তবে তাকে অভিশংসন করা করা হয়নি। তার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী দলের যোগসাজশ মার্কিন সরকার ব্যবস্থার গভীরে প্রবেশ করে এবং তা একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া রাশিয়া ইস্যু তদন্তের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও সেশন্সকে এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টেইনকে চরম হেনস্থা করেন ট্রাম্প।

এছাড়া নির্ভেজাল কিছু অসত্য প্রচার-প্রচারণার জন্য তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় স্পষ্টতই দেখা যায়, ট্রাম্প মার্কিন সরকার ব্যবস্থা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে ঝুঁকি তৈরি করে সংবিধান লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছেন।

 

http://www.jugantor.com/ten-horizon/2017/05/15/124656/