১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার, ৪:১২

ফের লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

নিত্যপণ্যের বাজার এখনো লাগামহীন। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না কোনভাবেই। এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত দু’দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। গত বুধবার যে মানের পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, তা গতকাল ১২০ টাকা। যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিলো ১০০ টাকায়, সেটা গতকাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে পেঁয়াজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বরং তারা বলছেন, দাম আরও বেড়ে যেতেও পারে।

পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়ি কাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। বেশির ভাগ এলাকার কৃষকরা ওই পেঁয়াজ তুলে ফেলেছেন। আর হালি পেঁয়াজের ভরপুর মৌসুম শুরু হতে কিছুদিন বাকি রয়েছে। মাঝখানের এ সময়ে চলছে সরবরাহ ঘাটতি। যে কারণে বাজারে দাম বাড়ছে। এদিকে আমদানির সবচেয়ে বড় বাজার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। আমদানি না থাকায় কয়েক মাস ধরে আগাম জাতের এ পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ফলে দেশীয় এ পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য বছরের এ সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এখন পেঁয়াজের দর থাকার কথা ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। কিন্তু সে চিত্র এখন আর নেই। এত চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বিরক্ত ক্রেতারা। তাদের বেশির ভাগ পেঁয়াজের এ বাড়তি দামে উষ্মা জানিয়েছেন।

পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বুধবার রাতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮২ টাকা। বৃহস্পতিবার সকালেই কেজিতে ১৫ টাকার মতো দর বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯৩ থেকে ৯৭ টাকা পর্যন্ত। মূলত পাইকারি বাজারে দর বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কিছু কিছু পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

তারা আরো জানিয়েছেন, ভারতের রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও গত দুই মাসে চীন ও পাকিস্তান থেকে কিছু পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। ফলে তাতে বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। আর ডলারের বাড়তি দামের কারণে অন্য দেশ থেকে আমদানি করলে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম পড়ে যায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ ও মুনাফা হিসাব করলে ১০০ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে যায়। তাই আমদানিকারকদের বড় লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে চান না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, শিম ৬০-৭০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা, সাদা মূলা ৪০ টাকা, দেশী গাজর ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৮০-১২০ টাকা, ক্ষিরা ৮০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ব্রোকলি ৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। দেখা যায় প্রায় সব সবজির দামই কমেছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। লাল ও সাদা আলু ৩৫ টাকা, দেশী রসুন ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানের কোন পণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে কয়েকটি পণ্যের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭৫ টাকা, খেশারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২১০ টাকা, কক মুরগি ২৭৫-২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫ টাকা, দেশী মুরগি ৫০০ টাকা, গরুর গোশত ৭৫০ টাকা, খাসির গোশত ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মাছের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৯০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, কালবাউশ ৫০০- ১২০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ -১২০০ টাকা, কাঁচকি ৪৫০ টাকা, কৈ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-১৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ১১০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০- ১৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০-১২০০ টাকা, শোল ৭০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/548489