৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ২:২৬

ফেরত না পেয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনদের আহাজারি

ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক ২৩ বাংলাদেশীর সহসা মুক্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিএসএফ দুই দেশের মধ্যকার বৈঠকে ওই বাংলাদেশীদের ভারতের ত্রিপুরার মনু থানায় হস্তান্তরের কথা জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ফেরত আসতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে, আটকের চার দিন পেরোলেও ওই গ্রামবাসীরা ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব ছাগলনাইয়া গ্রামের ৯৯ সীমান্ত পিলার এলাকা থেকে ২৩ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় বিএসএফ। প্রথম দিকে বিষয়টি আড়ালে রাখার চেষ্টা করলেও গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশের ২৩ দিনমজুর আটকের বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রাথমিকভাবে বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশীদের সহসা মুক্তির বিষয়ে স্বজনরা আশাবাদী ছিলেন। তবে চার দিনের মাথায় মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে আহাজারি।

বিএসএফের হাতে আটকরা হলেন- সাইমুম হোসেন, রাইসুল ইসলাম, সামিন, হারুন, লিটন, মাঈন উদ্দিন, মহসিন, কাজী রিপন, তাজুল ইসলাম সাকিল, হানিফ, আবুল হাসান, ইমরান, রুবেল, জাফর ইমাম মজুমদার, ওবায়দুল হক, জামাল উদ্দিন, আরিফ হোসেন, করিম, খোরশেদ, আজাদ হোসেন, মাহিম, হারুন ও ইমাম হোসেন। তাদের বেশির ভাগ ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌরসভা পূর্ব ছাগলনাইয়া, মটুয়া, রাধানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আটক ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে বিজিবি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ করে তথ্য যাছাই-বাছাই করছে। বিএসএফর পক্ষ থেকেও আটকদের তালিকা দেয়া হয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে ভারত থেকে সন্ধ্যার পর অবৈধপথে চিনি, শাড়ি-কাপড়, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য দেদার বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সীমান্তের ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন রাধানগর, মহামায়া, শুভপুর ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রতিরাতে অবাধে ভারতীয় চিনি, শাড়ি, কাপড়, মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। অবৈধ মালামাল ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচারের দৃশ্য দেখে স্থানীয় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশীরা অনেকটা আতঙ্কে থাকেন বলেও অভিযোগ তাদের। গ্রামবাসীরা জানান, এসব চোরাচালানের সাথে জড়িতদের অধিকাংশই স্থানীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। পৌর শহরের জমদ্দার বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পৌরশহরের জমদ্দার থেকে রাত ১টার পর শত শত বস্তা ভারতীয় চিনি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। সীমান্তের কাঁটাতার থেকে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে এক বস্তা চিনি বহন করে নিয়ে আসলে ২-৩ শত টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হয় শ্রমিকদের। তবে, চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা বরাবরই প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক বাংলাদেশীদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বিজিবি ৪ এর ফেনী জয়লস্কর সদর দফতরের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল শেখ মো: বদরুদোজ্জা নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, দু-দেশের মধ্যে বৈঠকে বিএসএফ তাদের জানিয়েছে আটকরা চোরাচালানির সাথে জড়িত থাকায় ত্রিপুরার মনু থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। আটককৃতদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেশে ফেরত আসতে হবে বলেও বিএসএফ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়। আটক বাংলাদেশীদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/812737