৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩৮

এতো অধঃপতন কেন হলো?

-ড. আবদুল লতিফ মাসুম

অতীতে অথবা নিকট অতীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। সেটি হয়েছে নেতিবাচকভাবে। ঢাকার অদূরে ছায়া সুনিবিড় সুন্দর এই ক্যাম্পাসে অসুন্দরের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে কর্তাব্যক্তিরা অভিযুক্ত হয়েছে অনেকবার। ভাইস চ্যান্সেলর খেদাও আন্দোলনে সম্ভবত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রেকর্ড দাবি করতে পারে। কারণে এবং অকারণে বামপন্থীদের আন্দোলনে অস্থির থেকেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আরও রয়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবনের মতো অপকর্মের ঘটনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই অধিকাংশ অভিযোগ। যে অভিযোগটি সবসময় কোন না কোনভাবে তাড়িত করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তা হচ্ছে ধর্ষণ, নারীনিপীড়ন এবং ছাত্রলীগের অন্যায় আচরণ। গত রোববার যা ঘটেছে তাও অতীতের হাজারো ঘটনার মতোই ন্যক্কারজনক। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক প্রশ্ন করেছেন এতো অধঃপতন কেন হলো? তার উত্তরে নিচের ফিরিস্তি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে জড়িত ৬ শিক্ষার্থীর ৪ জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা। ঘটনার পরপরই প্রশাসন আগের মতোই কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকবান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলছেন।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন অন্যতম অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ। ঘটনার দিন মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলে কিছুদিন থাকবেন। কোন একটা অজুহাতে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে আসতে বলেন। স্বামী তার স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। রাত ৯ টার দিকে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। আসামাত্রই অপরাধী এবং তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীর স্বামীকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। তাকে বেঁধে ফেলে মারধর করে অপরাধীরা। পরে অপরাধীরা ওই নারীকে হল সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করে। তার পরদিন ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আদালত ৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। এই ঘটনায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। কয়েকজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তাদের সনদ স্থগিত করা হয়। এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি ছিলো আই-ওয়াশ।

যদি ঘটনাটি ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যায় তাহলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে কখনোই তৎপর হয়নি। প্রদত্ত শাস্তি কাগজে কলমেই রয়ে গেছে, বাস্তবায়িত হয়নি। এরফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাম্পাস অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। কোন না কোনভাবে অপমান অপদস্থ হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী ও বহিরাগতরা। ভয় এবং আত্মসম্মানের কারণে মুখোমুখি হয়নি অনেকেই। এরকম ঘটনার হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে গত বছরগুলোতে। সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা উল্টোলে অনেক প্রমাণ পাওয়া যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই ভয়ানক ঘটনাবলীর নীরব সাক্ষী। তারা নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা অনুভব করেন। কিন্তু ভীতির রাজ্যে বসবাস করেন অনেকে। অবশ্য ওই ঘটনার পর বেশ কিছু শিক্ষককে প্রতিবাদী হতে দেখা গেছে। তারা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অপরাধে জড়ান। প্রশাসন তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসে না। এসব প্রশাসনের বিচারহীনতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতাকে প্রমাণ করে যার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
গৃহবধূকে ধর্ষণের পর বেরিয়ে আসছে এধরনের নানা অপকর্মের ইতিহাস। ঘটনার তিনদিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি সাভারে সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল রানা নামে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের শাহরাইল থেকে সাভার মডেল থানা পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তাদের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তবে তারা সাভারের চাপাইন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন।

দুই.
দুঃখজনক হলেও সত্য রাজধানীর অদূরে কেবলমাত্র জ্ঞান সাধনার নিবিড় পরিচর্যার উদ্দেশ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, তা অশুভ রাজনীতি আর নারী নির্যাতনের আখড়ায় পরিণত হয়। প্রথম থেকেই সেখানে নারী স্বাধীনতার নামে অবাধ স্বাধীনতার চর্চা ঘটে। বাম রাজনীতির প্রবক্তারা এই কাজে নারী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের কোথাও বামদের পাত্তা না থাকলেও সেখানে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী গড়ে ওঠেছে। তারা আগে থেকে প্রচলিত সান্ধ্য আইন অগ্রাহ্য করে। প্রকারান্তরে মেয়েরা অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার স্বাধীনতা ভোগ করে। অধ্যয়নের পরিবর্তে প্রেম বিষয়ক সার্থকতা লক্ষ্য করা যায়। তারা প্রচার করে যে, পারস্পরিক সম্মতিতে মিলনে অন্যায় নেই। কোন কোন বিভাগে মেয়েদের পর্দা করায় তিরস্কার করা হয়। কোন কোন শিক্ষক ধর্ষণের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন। অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এতোঅধিক সংখ্যক শিক্ষক অভিযুক্ত হননি। বেশ কয়েক বছর আগে ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালন করে কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছিলো ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা মানিক। তার বিচার হয়নি। বরং অভিযোগ আছে নেতারা তাকে নির্বিঘেœ বিদেশ পলায়নে সহায়তা করেছেন। আরেকটি ঘটনা জাহাঙ্গীরনগরের এই ঘটনার সাথে একেবারে মিলে যায়। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট এমসি কলেজ প্রাঙ্গণে স্বামীকে আটক রেখে স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিলো ছাত্রলীগের চিহ্নিত ৬ সন্ত্রাসী। কিন্তু কোন ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে গত কয়েক বছরে ধর্ষণের নজিরবিহীন রেকর্ড হয়েছে এই দেশে। সাথে রয়েছে ধর্ষণের পর হত্যা ও বীভৎসতা।

তিন.
শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর নয় ক্ষমতাসীনদের দাপটে গোটা দেশই ধর্ষণের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনার পরের দিন সংবাদপত্রে আরেকটি ধর্ষণের বিচারের রায় প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে আওয়ামী লীগের নেতারা। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাসহ ১০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও অপর ৬ আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত। একই সাথে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা। অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ১৬ জন আসামীর মধ্যে একজন পলাতক ছিলো। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট শেষে রাতে বাড়িতে ঢুকে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে ১ নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ ছিলো, ভোট কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের ব্যক্তিদের ভোট না দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ওই হামলা ও গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনাটি তখন দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ওই ঘটনার পরদিন নির্যাতিত নারীর স্বামী স্থানীয় থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমীন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার সুবর্ণচরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সেখানে ঘটেছে একই পৈশাচিক কান্ড। সেখানে এবার সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে চর ওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বার ও তার সহযোগীরা। গত সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ মা-মেয়েকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নির্যাতিত গৃহবধূর বয়স ৩০। তার মেয়ের বয়স ১২ বছর। মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর। সে ৩-৪ দিন পর পর বাড়িতে আসে। সে সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা সিঁধ কেটে এই অঘটন ঘটায়। ভুক্তভোগীর অভিযোগে প্রকাশ, ওই মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
গোটা দেশে ছাত্রলীগের অন্যায়-অপকর্মের সাথে সাথে ধর্ষণের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নমুনাস্বরূপ সেসব ঘটনার মাত্র কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ বাগেরহাটের দুই তরুণীকে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে মো. শাকিল সরদার (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফকিরহাটের জারিয়া এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২. ০৯ আগস্ট ২০২৩ রংপুরের পীরগঞ্জে হত্যার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াছিন আরাফাত শুভর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

৩. ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের মামলায় নাঈম কাজী (২৪) নামে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

৪. টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিব মিয়ার (২৪) বিরুদ্ধে ঘরে ঢুকে এক নববধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৬ মে ২০২৩ ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে সাকিব ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

৫. কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক দুই কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২৩ মে ২০২৩ অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

৬. মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতলার সিঁড়িতে এক কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে, ০৭ জুলাই ২০২৩ ভিকটিমের মা বাদী হয়ে শেখ শাকিল (২২) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করে মামলা করে।

৭. ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির এক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে। তার নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। এক তরুণীর মামলায় ০৯ অক্টোবর ২০২৩ রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দু’জনেরই গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। জানা গেছে, শাহজাহান ছাত্রলীগের ২০১৯ থেকে ২০২২ মেয়াদের কমিটির উপকর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ছিল।
২০০৯ সাল থেকে বিগত ১৭ বছরের এ ধরনের ঘটনা যদি লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে এক মহাকাব্য রচিত হবে। ছাত্রলীগ না বলে অনেকে বলছেন ‘ধর্ষণলীগ’। সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা গত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ চ্যানেল ২৪ এর এক টকশোতে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ সংগঠনের নামের সাথে ধর্ষণ শব্দটি যোগ হয়ে গেছে’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নামী শিক্ষক একেএম শাহ নেওয়াজ তার বিশ্লেষণে বলেন, ‘আমি আমার এ ছাত্রদের বখাটে বানানোর জন্য দায়ী করবো আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা তাদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য হাতে ধরে নষ্ট করছেন তরুণদের। এসব কিছু দেখে সন্দেহ হয় আওয়ামী লীগ নেতারা দল ও দেশকে ভালোবাসেন কিনা? যদি বাসতেন, তাহলে তাদের পরিচর্যায় এবং শক্ত নৈতিক অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা তরুণরা এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারতো না। (যুগান্তর, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪)

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদিগুরু এরিস্টটল রাষ্ট্রকে নৈতিক প্রতিষ্ঠান বলেছেন। মনিষী প্লেটো শিক্ষা এবং কেবলমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে দেশের শাসকগোষ্ঠীকে পরিশুদ্ধ করতে চেয়েছেন। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সমস্ত কর্মকান্ড নৈতিকতা দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে Nation Building বা নৈতিক জাতি গঠনের ভবিষ্যৎ সৎ প্রজন্ম। তবে অনৈতিকতার দীক্ষা দিয়েছেন ভারতের চাণক্য এবং ইতালির মেকিয়াভেলি। শেষোক্তদের আদর্শে চলছে বাংলাদেশ। এখানে কোন কিছুই অন্যায় নয়-যদি শাসকদলের সমর্থন থাকে। এভাবে Disorder becomes the order of the day. দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কখনো কখনো অভিমান করলেও আসকারা দিয়েছেন তার চেয়েও বেশি। ধর্ষণের যে মহামারি দেখা দিয়েছে সে সম্পর্কে ক্ষমতাসীন শীর্ষনেতারা ওয়াকিবহাল নন এমন চিন্তা করা যায় না। কিন্তু ছাত্রলীগকে শিক্ষা ও দীক্ষা দেওয়ার কোন উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করি না। তাই আজ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কোন জায়গাতেই নারীরা নিরাপদ নন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আজ সময় এসেছে দল ও মত নির্বিশেষে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার। আওয়ামী লীগ চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না। এই দেশ ও দেশের মানুষেরা চিরকাল থাকবে। সাময়িক স্বার্থ নয়, চিরকালের স্বার্থ রাজনীতিকদের তাড়িত করুক-এইই আজকের প্রার্থনা।

https://www.dailysangram.info/post/548344