৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ৭:০৮

সুবর্ণচরে আবারও দলবদ্ধ ধর্ষণ

পৈশাচিকতার শিকার মা-মেয়ে : আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার

সুবর্ণচর উপজেলায় সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। চুরি করতে ঘরে ঢুকে ধর্ষণের পর লম্পটরা ১৭ হাজার টাকা, নাকফুল ও কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। সোমবার রাত ২টার দিকে উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামে গৃহবধূ (৩০) ও তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরে চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে মুন্সি মেম্বারকে প্রধান আসামি এবং আরও দুজনকে আসামি করে মামলা করেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে একজন ভেতরে ঢোকে। এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুজন ঢোকে। এরপর দুজন পালাক্রমে তাকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে হাত-পা ও মুখ বেঁধে তারা সোনা ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। গভীর রাতে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাদের ঘরে আসে এবং পুলিশে খবর দেয়।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ওই স্থানে পুলিশ তাকে এবং সকালে ভুক্তভোগীদের থানায় আনা হয়। চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গৃহবধূ মামলা করার পর দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ জেলা শহর মাইজদীর কাদির হানিফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুন্সি মেম্বারকে (৫০) গ্রেফতার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন জানান, গ্রেফতারের পর মুন্সি মেম্বারকে জেলা সদর থেকে চরজব্বার থানায় নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অপর দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

এদিকে, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী বলেছেন, সংগঠন বিরোধী কাজে জড়িত হওয়ায় চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে রয়েছেন। তবে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই মুন্সি মেম্বারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

জানা গেছে, গ্রেফতার মুন্সী মেম্বার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও চরকাজী মোখলেছ গ্রামের গোলাপ রহমানের ছেলে। অপরদিকে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে বাড়ি করেন নির্যাতিতা গৃহবধূর দিনমজুর স্বামী। বিভিন্ন এলাকায় তিনি কাজ করতে যান এবং ৩-৪ দিন পর বাড়িতে আসেন। বাড়িতে তিন সন্তানসহ তার স্ত্রী থাকেন। দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ি থেকে বের। এ সুযোগে লম্পটরা এ ঘটনা ঘটায়। নির্যাতিতার স্বামী জানান, মুন্সী মেম্বার কিছু দিন আগে তার স্ত্রীকে পোড়া মোরগ খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়। এছাড়া তাকে মাঝে-মধ্যে সহযোগিতা করারও চেষ্টা করত। মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মুন্সী মেম্বার প্রায় আমার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। মোবাইল ফোন নম্বর ব্লক করে দিলে মুন্সি মেম্বার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং এ ঘটনা ঘটায়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, রাতের বেলায় ঘরে হঠাৎ করে আলো জ্বলে উঠলে তার ঘুম ভেঙে যায়। কে কে বলে উঠলে তার মুখ চেপে ধরে উড়না দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে খাটের নিচে নামিয়ে ফেলে মুন্সি মেম্বার ও তার এক সহযোগী। এরপর পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় অপরজন পাশের কক্ষে গিয়ে তার বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় সোনা ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। মেয়ের বাঁধন খুলে দিয়ে তারা চলে যায়। এরপর মেয়ে এসে তার হাতের বাঁধন খুলে দেয়।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সোমবার নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এ ঘটনার মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/771573