১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৭

টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণাসূচকের প্রতিবেদন ‘অস্পষ্ট’....দুদক

বার্লিনভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদনে ‘অস্পষ্টতা’ আছে বলে মনে করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাংবিধানিক সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণাসূচক টিআই কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন করেছে, তা নিয়ে প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তাই তাদের এই ধারণাসূচকের বিষয়ে মন্তব্য করারও কোনও অবকাশ নেই। গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার একই সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে দুই ধাপ অবনমন হয়ে যৌথভাবে দশম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এককভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২, অর্থাৎ এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১টি দেশের পরে। প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকদের গতকাল বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, ‘দুদক ও টিআই কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা, আইন ও বিধি মোতাবেক কাজ করে। টিআই জার্মানভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা গোটা বিশ্ব নিয়ে কাজ করে। তারা তাদের ধারণা প্রকাশ করেছে। কীসের ভিত্তিতে করেছে তাও তারা বলেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট। কোথা থেকে কতটুকু কী নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটার কোনও ব্যাখ্যা নেই। দুদক থেকেও তারা কোনও সহযোগিতা নেয়নি। তবে দুদক তার আইন অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

দুদক সচিব বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ হলো-নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইন বিভাগ (জাতীয় সংসদ)। এদের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, অধিদফতর ও সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ বিষয়ে সরকার মন্তব্য করতে পারে। কোনও দফতরে দুর্নীতি সংঘটিত হলে এবং তা দুদকের গোচরীভূত হলে দুদক ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে দুদকের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের সিপিআই নির্ধারণের জন্য আটটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জরিপ চালিয়েছে বলে জানান দুদক সচিব। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রেটিংস, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স, ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্র্যাসি প্রজেক্ট এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট। তিনি বলেন, প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলোর আলোকে এই আটটি প্রতিষ্ঠানের জরিপের ভিত্তিতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রণয়ন করেছে টিআইবি। তারা কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম করেছে, সেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনও কিছু উল্লেখ নেই। তাই এই প্রেক্ষাপটে টিআইর ধারণাসূচকের বিষয়ে দুদকের পক্ষে মন্তব্য করার কোনও অবকাশ নেই।


দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, তাদের সবকিছুই তো ধোঁয়াশা, কোথা থেকে কতটুকু কী নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে-সেটি পরিষ্কার না। কোন কোন বিষয়ের ওপরে কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, যেগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। তারা একটি পারসেপশন প্রকাশ করেছে। সেটি তারা করতেই পারে।’

https://www.dailysangram.com/post/547712