৩০ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৩১

ঘুমধুম সীমান্তে গোলাগুলী মর্টার শেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক

৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলী চলছে। বাংলাদেশের লাগোয়া মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সেখানকার সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশ প্রান্তে। এরইমধ্যে গতকাল সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বুচিডংয়ে একটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে জান্তার সেনারা। এতে সেখানকার একটি বাজার ভস্মীভূত হয়েছে। চলমান এই সংঘাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বহু সদস্য হতাহত হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

অবশ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে। যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া মিয়ানমারের এক নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। উত্তেজনার মধ্যে রোববার সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে সীমান্তঘেঁষা এলাকার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলী চলছে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, শনিবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলী ও বোমার আওয়াজ শোনা যায়। আজও (সোমবার) আবার ৩৩ নম্বর পিলার সীমানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিম কুলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, সকাল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলীর কারণে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী জানান, সীমান্তে গোলাগুলীর কারণে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এবং সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদরাসা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকারিয়া জানান, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্থানীয় জনসাধারণ যদি নিরাপত্তার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে আসে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, সকাল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলীর কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকূল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজকের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম হোসাইনি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার: কক্সবাজার সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফের ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ওপাড়ে রাখাইনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারী মর্টার ও গুলীর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিজিবি জানায়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলমান থাকায় সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বজায় রেখেছিল বাংলাদেশ। এবার সীমান্তের কাছাকাছি সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে এবং এ অবস্থায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। কমান্ডিং অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা সতর্ক আছি।

বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের দিক থেকে ভারী মর্টার ও গুলীর শব্দে টেকনাফের হোয়াইকং ইউনিয়নের উলুবুনিয়া এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। হোয়াইকং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা জানান, মিয়ানমার থেকে আসা একটি গুলী তার এলাকার একটি বাড়িতে এসে পড়েছে। গুলী ও গুলীর শব্দ সম্পর্কে বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন। কিন্তু ওই এলাকা তার এখতিয়ারের মধ্যে না। এ বিষয়ে তিনি ৩৪ বিজিবির অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা কিংবা বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তেমন কোনো উত্তেজনা কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন এপিবিএন-৮-এর অতিরিক্ত ডিআইজি আমীর জাফর। তিনি বলেন, ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ক্যাম্পে উত্তেজনা ছড়ানো কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

https://www.dailysangram.info/post/547501