১৩ মে ২০১৭, শনিবার, ৯:০১

আল্লামা সাঈদীর রিভিউ আবেদন কার্যতালিকায়

জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর, খ্যাতিমান মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) এবং সাজা বাড়াতে সরকারের করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের ১৪ মের কার্যতালিকায় রয়েছে। আপিল বিভাগের রোববারের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রিভিউ আবেদনটি রয়েছে ৩০ নম্বর ক্রমিকে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার ( এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এ রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার।
গত ৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ ১৪ মে শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন আদালতে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে সরকার পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী খালাস চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছিলেন। রিভিউ আবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার, ১৬ টি গ্রাউন্ডে খালাসের আরজি রয়েছে। তখন আল্লামা সাঈদীর প্রধান কৌঁসুলি খন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সরকার পক্ষের রিভিউ আবেদন করার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। অযথা চাপ সৃষ্টির জন্যই সরকারপক্ষ এ রিভিউ আবেদন করেছে। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে রিভিউ আবেদন দায়ের করেছে তারা। রায় পর্যলোচনা হলে আশা করি রিভিউ আবেদনে আমরা জয়লাভ করবো এবং আমার বিশ্বাস তিনি (আল্লামা সাঈদী) মুক্তি পাবেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাঈদী সাহেবকে বিশাবালী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় সুখরঞ্জন বালী প্রসিকিউশনের সাক্ষী হয়েও সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসলে ট্রাইব্যুনালের গেটে ডিফেন্স আইনজীবীদের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরে রহস্যজনকভাবে তাকে পাওয়া যায় ভারতের একটি কারাগারে। তিনি কিভাবে ভারত গেলেন এটাই রহস্য।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকালে আল্লামা সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে আল্লামা সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দেন। তবে তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় আসে।
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেন, প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতে বলেছেন অভিযুক্ত (আল্লামা সাঈদী) রাজাকার, তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সুনির্দিষ্ট করে ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগে। কিন্তু ডিফেন্স পক্ষের আপিল এবং সাক্ষীরা ক্যাটাগরিভাবে দেখিয়েছে তিনি (আল্লামা সাঈদী) অপরাধ সংঘটনের স্থানে ওই সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি রওশন আলীর (ডিডব্লিউ-৬) দোহা খোলায় ছিলেন। তিনি রাজাকার ছিলেন না এবং অপরাধ সংঘটিত করেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। প্রসিকিউশনের মামলা এবং ডিফেন্সের আপিল থেকে দেখা যায় অভিযুক্ত রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন প্রসিকিউশন তা চূড়ান্ত প্রমাণের (ক্রুশিয়াল ফ্যাক্ট) মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে দেখাতে ব্যর্থ। উপরন্তু ডিফেন্সপক্ষে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং প্রামাণ্যচিত্র পরিষ্কার সংশয় সৃষ্টি করে প্রসিকিউশনের করা তিনি ১৯৭১ সালে রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এ বিষয়ে। ফলে অভিযুক্তকে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া হলো। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত যে প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগ সন্দোহীততভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি (আল্লামা সাঈদী) সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। একইসঙ্গে অভিযুক্তের অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাকে খালাস দেয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ড দেয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে একই বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন আল্লামা সাঈদী।

http://www.dailysangram.com/post/283489-