১২ মে ২০১৭, শুক্রবার, ৪:১১

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধানসহ সংশ্লিষ্ট আইনের কয়েকটি বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।


বৃহস্পতিবার পৃথক ৩টি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

দুটি পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় বছর আগে এবং অপর একটির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর আগে এ বিষয়ে রুল হয়েছিল। রুলের ওপর গত মার্চে শুনানি শেষে আদালত আবেদনগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম বলেন, মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর ১১টি ধারা ও উপধারার বৈধতার প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। এর মধ্যে আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া ক্ষমতা, ১৩ ধারায় আপিল ও ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারকে দেয়া ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। এসব ধারা অবৈধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, আইনের এসব ধারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং মাসদার হোসেন মামলার রায় ও সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী।

ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম বলেন, রিটকারীদের মধ্যে দুজন ছিলেন ভ্রাম্যমান আদালতে সাজাপ্রাপ্ত। আদালত তাদের সাজা বাতিল করেছেন। তবে অতীতে এই আইনের অধীনে যাদেরকে সাজা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যেগুলো বিচারাধীন আছে সেগুলো ব্যতিত অন্য সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে ‘পাস্ট এন্ড ক্লোজ’ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান কামরুজ্জামান খান। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি তার সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।

এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আরও একটি রিট আবেদন করেন মো. মজিবুর রহমান।

ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক ওই মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, ‘জরুরি অবস্থা’ চলাকালে ২০০৭ সালে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে। এটি বাতিল হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ পাস করে।

http://www.jugantor.com/online/national/2017/05/11/46910/