২১ জানুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ৩:৫২

খাবারের জন্য হাহাকার : আয়হীন পরিবহন শ্রমিকরা

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি

 

এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল থেকে ত্রুটি সারিয়ে গ্যাস আসা শুরু হলেও গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতি। ফলে গতকালও কাটেনি মানুষের হাহাকার অবস্থা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের খাবার জোগাতে দুর্দশায় পড়তে হয়েছে। আবার অধিকাংশ গণপরিবহন ও সিএনজি টেক্সিগুলো গ্যাসের অভাবে বন্ধ থাকায় বিপুল সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক তিন দিন ধরে আয়হীন। অন্যদিকে ৭-৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর কিছু কিছু টেক্সি ও মিনিবাস গ্যাস পেলেও সেসব যানবাহনে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। শিল্প কারখানার গ্যাসনির্ভর ইউনিটগুলো যথারীতি গতকালও ছিল বন্ধ। এমনি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে চরম দুর্ভোগের।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, মহেশখালী থেকে এলএনজির সরবরাহব্যবস্থায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে চট্টগ্রামে টোটাল শাটডাউন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সবগুলো গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা সিইউএফএল ও বহুজাতিক সারকারখানা কাফকোসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সিএনজি ফিলিংস্টেশন এবং বাসাবাড়ির চুলা।
গতকালও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় খাবার চোগাতেই নগরজুড়ে হাহাকার পড়ে যায়। তাছাড়া বিপুলসংখ্যক পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সবুজ নামের এক সিএনজি ট্যাক্সি চালক গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সকাল ১০টায় বাদুড়তলা বালতি কোম্পানির সামনে গ্যাসের সিরিয়ালের জন্য দাঁড়িয়ে এখনো আছি। দিনভর কোনো আয় নাই, তাই কষ্টের কথা আর কী বলব’। চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুচ্ছফা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বিকেল পর্যন্ত গ্যাসের দেখা পাইনি, তবে কিছু কিছু এলাকায় মিটি মিটি এসেছে বলে শুনেছি।’
এমনিতেই চাহিদার তুলনায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের, যা মিলছিল তাও অনেকটাই আমদানিকৃত এলএনজি-নির্ভর।

কিন্তু মহেশখালীতে স্থাপিত দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে এক্সিলারেট এনার্জির জাহাজের ড্রাইডকিং শেষে কমিশনিং এবং অপর জাহাজের ড্রাইডকিংয়ের জন্য খালি করতে গিয়েই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র মতে, দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাইপ লাইনের মধ্যে আসার কথা থাকলেও একটি টার্মিনাল গত ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকায় পাঁচ শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে এলএনজি সরবরাহ মিলছিল। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তা শূন্যে নেমে আসে। ত্রুটি সারিয়ে গতকাল শনিবার আবারো গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি (কেজিডিসিএল)।

কিন্তু গতকালও বাসাবাড়ির গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন রাইস কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি, ইনফ্রারেড কুকার, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে একটি অংশ নিজেদের খাবারের কোনো রকমে ব্যবস্থা করতে পারলেও নাগরিকদের বেশির ভাগকেই খাবারের জন্য উচ্চমূল্য গুনতে হয়েছে। কাউকে কাউকে মন্তব্য করতে শোনা যায় মাসের পর মাস বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সঙ্কুচিত করে সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। বাস্তবেও গতকাল বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে গিয়ে নতুন করে সিলিন্ডারের ক্রেতা বৃদ্ধির তথ্য মিলেছে।

এদিকে কেজিসিএল সূত্র জানিয়েছে, এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরাসরি গ্যাস যাচ্ছে ন্যাশনাল গ্রিডে। সেখান থেকে কিছু কিছু গ্যাস চট্টগ্রামে আসছে, ফলে চাপ স্বল্পতার কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে সূত্র জানায়।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিসিএল) অপারেশন ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, শুক্রবার রাত থেকে কক্সবাজারের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস দেয়া শুরু হয়েছে। গ্যাস মূল পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। শুরুতেই হাইপ্রেশার চালু করা যায়নি। আবার ন্যাশনাল গ্রিড হতে যেহেতু চট্টগ্রামে ঢুকছে সে কারণে এখানে চাপ কম আসছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/807995